রবিবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

টিবি হাসপাতালের জমি জাল দলিল ও দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন দুই চিকিৎসক

Paris
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ ১২:২০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের (টিবি) জায়গার জাল দলিল ও দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন দুই চিকিৎসক। নগরীর টিবি পুকুরের পূর্ব পাশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ১৬ শতক জায়গার জাল দলিল করে চিকিৎসক নুরুল ইসলাম ও চিকিৎসক আ ন ম মোজাম্মেল হক এ দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

তাদের সাথে অংশিদার হিসাবে রয়েছেন ডাক্তার শফিউল্লাহ, আশরাফুন নেসা, রহিমা তাসলিম ও রাইমা তাসলিম। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এই জায়গা দখল করে ভবন দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে টিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেছেন। দখলবাজ চিকিৎসকদের খাজনা খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারী জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞাজারি থাকলেও চলছে নির্মাণ কাজ। দুই চিকিৎসকের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ সরকারী লোকজনই।

জানা গেছে, টিবি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬০ সালের দিকে আশপাশের বেশ কিছু জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। তার সাথে সিএস দাগ নং ৪০৫ গরিমন বেওয়া নামে এক নারী তার ক্রয় করা ২৫ শতক সম্পাত্তির সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। এরমধ্যে টিবি পুকুরের পূর্ব পাশে রাস্তা হওয়ার কারণে সরকারের অধিগ্রহণ করা কিছু জায়গা রাস্তার পূর্ব পাশে পড়ে যায়। (যার অবস্থান টিবি পুকুরের পূর্ব পাশ) এক সময় টিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই জায়গা কর্মচারিদের থাকার জন্য মৌখিক ভাবে বরাদ্দ দেয়। যেখানে চিকিৎসকরা বহুতল ভবন নির্মাণ করছে সেখানে প্রায় সাতটি পরিবার বসবাস করতো।

এরা হলো- টিবি হাসপাতালের কর্মচারি শাজাহান আলী, ওহাব আলী, মোহাম্মদ আলী, সুফিয়া বেগম, মোস্তফা, সামাদ আলী ও হেকমত আলী। তার আশপাশে এখনো বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। এরমধ্যে ওই সাত পরিবারের যারা চাকরি করতেন তারা সবাই মারা যাওয়ার পর সেখানে তার ছেলে মেয়েরা বসবাস করতো। এরই মধ্যে টিবি হাসপাতালের ওই জায়গা দখল নিতে কিছু কতিপয় ব্যক্তিরা মরিয়া হয়ে উঠে। ২০০১ সালের দিকে বসবাস করা কর্মচারির পবিারের লোকজনদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়।

গরিমন বেওয়ার কাছ থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে ১৯৬৩ সালে। আর সেই জমি গরিমন বেওয়ার ছেলে আলেপ, আয়জদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও আলাউদ্দিনের কাছ থেকে নগরীর ভাটাপাড়া আবু বাক্কার ১৯৯২ সালে ৯ শতক ও তার ছেলে মাফিদুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে .৫৩৩ একর জমি কিনে রেজিষ্ট্রি করেন। পরে এ নিয়ে টিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবু বাক্কারের দলিল বাতিলের জন্য মামলা করলে আদালত টিবি হাসপাতালের পক্ষে রায় দেন।

তারপরও মাফিজুল ইসলাম মুন্না ৪৩২৭ নম্বর দলিল মুলে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ওই জমির পাওয়ার অ্যাটর্নি দেন কুমিল্লার ফজলুল করিম মজুমদার নামে এক ব্যক্তিকে। যদিও ফজলুল করিম মজুমদার নিজেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের ভাগনে পরিচয় দিতেন। পরে ফজলুল করিম মজুমদার পাওয়ার অ্যাটর্নির ক্ষমতা বলে .৫৩৩ একর জমি বিক্রি করে দেন রাজশাহীর ডাক্তার নুরুল ইসলামের কাছে। তিনি জমিটি কিনে মোটা অংকের টাকা খরচ করে রেজিষ্ট্রি ও নিজের নামে খাজনা খারিজ করেন নেন।

পাওয়ার অ্যাটর্নির বলে ডাক্তার নুরুল ইসলাম জমিটি কিনলেও রেজিষ্ট্রি দেখিয়েছেন মফিদুল ইসলাম মুন্নার নামে। আর দলিল দাতার পক্ষে রেজিষ্ট্রিতে সাক্ষর করেছেন ফজলুল করিম মজুমদার। যদিও মুন্না বলছে, তিনি ওই জমি রেজিষ্ট্রি করে দেননি। ডাক্তার নুরুল ইসলাম যে দলিল করেছেন সেটি জাল দলিল। ওই জায়গা টিবি হাসপাতালের জানার পর তিনি সেখান থেকে সরে আসেন। ফজলুল করিম মজুমদার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমিটি ডাক্তার নুরুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেছেন।

এদিকে একই স্থানে বহুতল ভবন করছেন ডাক্তার মোজাম্মেল হক। তার ভবনটিও করা হচ্ছে ৮ কাঠা জমির উপর। তিনি ওই জমিটি কিনেছেন, আবু ইউসুফ সেলিম, মাসুদ রানা, জামাল উদ্দিন, মনসুর রহমানসহ কয়েকজনের কাছ থেকে। তারা এই জমির পাওয়ার অ্যাটর্নি বলে মালিক ছিলেন। ২০২১ সালে উপরোক্ত ব্যক্তিরা ১৭০৯ নম্বর দলিল দেখিয়ে এই জমি ডাক্তার মোজাম্মেল হকের কাছে বিক্রি করেছেন। ৪০৪ ও ৪০৫ দাগের জমি ডাক্তার নুরুল ইসলাম ও ডাক্তার মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে ৬জন কিনে তারা বহুতল ভবন করছেন। যা সম্পন্ন অবৈধ।

এছাড়াও আদালত থেকে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাজারী থাকলেও ক্ষমতার বলে এই দুই চিকিৎসক তাদের ভবন নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। যদিও তারা বলছেন আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এনেছেন।

অপরদিকে, তিন ডাক্তারসহ ৬জন এই জমি কেনার পর রাজশাহী নগরীর শীর্ষ সন্ত্রসাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের দিয়ে জমি দখল নেয়। দিনে দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দিয়ে এই জমি দখল করে দেয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রুবেল, তার ভাই সেলিম জাফর, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাবেক রাসিক মেয়রের পিএস আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটু, লটন, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু, ওই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা বাবু, আবু ইউসুফ সেলিমসহ একটি বাহিনী। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মুলত টিবি হাসপাতালের এই জায়গা অস্ত্রের মুখে দখল করে দেয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা কথা বলা হয় ডাক্তার মোজাম্মেল হকের সাথে। প্রশ্ন করা হয় সরকারী জায়গা কিভাবে কোনো ব্যক্তির নামে রেজিষ্ট্রি ও খাজনা খারিজ হয়। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আদালত যে রায় দিবে আমি সেভাবে কাজ করবো।

এব্যাপারে ডাক্তার নুরুল ইসলাম বলেন, যেহুত বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান, সেহুত এব্যাপা কথা না বলাই ভাল। তিনি বলেন, এই জমির বিষয়ে রাজশাহীর সব সাংবাদিকরাই জানে। তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে বলেন, সবার সাথেই আমার কথা হয়েছে, সবার কাছেই এই জমির কাগজপত্র রয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. মজিবুর রহমান বলেন, তারা জেনে শুনেই টিবি হাসপাতালের এই জমি ক্রয় করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ১৯৬৩ সালে অধিগ্রহণ করা জমি কিভাবে তার ওয়ারিশরা বিক্রি করতে পারে। আর যারা এই জায়গা ক্রয় করেছেন তারাই বা কিভাবে সরকারী জমি কিনতে পারেন। যারা সরকারী জায়গা জাল দলিল করে খাজনা খারিজ করেছে আমরা তাদের খাজনা খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন করেছি। মামলা চলমান আছে। আশা করছি রায় টিবি হাসপাতালের পক্ষে রায় আসবে।

সর্বশেষ - অপরাধ ও দুর্নীতি