সোমবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাদাম বিক্রেতা থেকে এলজিইডি’র ঠিকাদার মাফিয়া মান্নান

Paris
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪ ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি :
ছিলেন বাদাম বিক্রেতা। তারপর সেচ পাম্পের কেয়ারটেকার। শেষ অবধি আওয়ামীলীগ সরকারের ছত্রছায়ায় হয়ে ওঠেন মাফিয়া ঠিকাদার। শুধুই কি আওয়ামলীগ সরকার এর আগে বিএনপি সরকারের সাংসদের সাথে ছিলো দারুন সখ্যতা।

বলছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল মান্নানের কথা। যিনি এখন দুই কোটি টাকা মূল্যের পাজেরো গাড়িতে চলাফেরা করেন। আর ছেলে সুমন আলী চড়েন নিশান ব্র্যান্ডের গাড়িতে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় দুই মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা দামের গাড়ি। আছে শত কোটি টাকার সম্পদ। তবে বসবাস করেন রাজশাহী মহানগরীর উপশহরে কোটি টাকার আলিশান বাড়িতে।

কিন্তু কিভাবে ? জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এলজিইডিতে সিন্ডিকেট আর দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তিনি। আর তা করতেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনের সাবেক এমপি মো. জিয়াউর রহমানের ওপর ভর করে। এলজিইডিতে এখনো তার একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক কর্মকর্তা। শুধু কি তাই, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী সবাই তার পকেটে। এর আগেও বিএনপি শাসনামলে সাংসদ সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনের নাম ভাঙ্গিয়ে চলতেন বীর দর্পে।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার আব্দুল মান্নান এলজিইডি’র কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত দুই দশকে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার কাজগুলো নামকাওয়াস্তে করেই বিল উত্তোলন করেছেন। আবার কখনো কখনো নামমাত্র কিছু কাজ করে আগেই বিল তুলে নিয়েছেন। এছাড়া লক্ষ টাকার কাজ করে নিয়ম-বর্হিভূতভাবে কোটি টাকার বিল তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে মান্নানের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত সবার সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মান্নানের। এক সময় বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই ঠিকাদার। পরে সখ্যতা গড়েন আওয়ামী লীগের এমপি জিয়াউর রহমানের সাথে। এমপি’র ওপর ভর করে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময় তার এলজিইডিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এখনো তার ইশরার বাইরে কিছু হয় না। নামমাত্র কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এলজিইডিতে তার প্রভাব বিস্তারের কারণে অনেক ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল মান্নান এক সময় বাদাম বিক্রি করতেন। এরপর গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলামের মালিকানাধীন সেচ পাম্পের দেখাশোনা করতেন। পরে ওই বিএনপি নেতার লাইসেন্সে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বিএনপি’র সাবেক এমপি সৈয়দ মুঞ্জুর হোসেনের সাথেও ছিল সখ্যতা। বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ এই ঠিকাদার ২০০৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি জিয়াউর রহমানের সাথেও ঘনিষ্টতা গড়ে তোলেন। এমনকি এমপিকে উপহার হিসেবে কিনে দেন একটি সাদা রংয়ের মাইক্রো। ধীরে ধীরে জিয়ার ছত্রছায়ায় ঠিকাদারিতে মাফিয়া হয়ে ওঠেন আব্দুল মান্নান। এলজিইডিতে আধিপত্য বিস্তার করেন। শুরু করেন এলজিইডি’র দরপত্র নিয়ন্ত্রণ। এলজিইডি’র এই মাফিয়া শুধু ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রক নন, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীদের বদলি হতো তার ইশারায়। এলজিইডি’র অনেক কর্মকর্তা সুবিধাজনক উপজেলায় বদলির জন্য তদবির করেন আব্দুল মান্নানের কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল মান্নানের লাইসেন্সের নাম মো. আব্দুল মান্নান ও তার ছেলে সুমন আলীর লাইসেন্স আলী’জ ড্রিম কর্পোরেশন। দুর্নীতি আর অনিয়ম ঢাকতে বিভিন্ন লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করেন জয়েন্ট ভেঞ্চারে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মমিনুল হক, ঢাকার এমএমবিইএল, নিট বসুন্ধরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেলিম রেজার লাইসেন্স ব্যবহার করেন তিনি। বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদীর ওপর ২২ কোটি টাকার কালুপুর সেতু এবং বাঙ্গাবাড়ী ও দলদলী ইউনিয়নের মহানন্দার ওপর ৬৩ কোটি টাকার সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ করছেন আব্দুল মান্নান। তবে হরিপুর ব্রিজের কাজ আব্দুল মান্নানের লাইসেন্সে হলেও কাজটি ঠিকাদার হিসেবে বাস্তবায়ন করছেন কৃষকলীগ নেতা রুহুল আমিন রাসেল। তবে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি জিয়াউর রহমান জেলা ছাড়ার পর চলমান প্রকল্পের মালামাল লুট হয়েছে এমন প্রপাগান্ডায় অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার আব্দুল মান্নান।

জানা গেছে, সব বড় কাজের ঠিকাদার আব্দুল মান্নানের রয়েছে গোমস্তাপুর উপজেলার জাতাহারা এলাকায় শিউলী রাইস মিল, একই উপজেলার বঙ্গপুরে সাথী ও মান্নান নামে দুইটি ইটভাটা, জমিসহ অগাধ সম্পদ, সদর উপজেলার মহারাজপুরে আছে আলী’জ ড্রিম ফিলিং স্টেশন নামে একটি পেট্রোল পাম্প, রাজশাহী মহানগরীতে রয়েছে একাধিক প্লট ও উপশহর এলাকায় স্যাটেলাইট স্কুলের পাশে ১০তলা ভবন এবং রয়েছে ঢাকায় ফ্ল্যাট। এদিকে আব্দুল মান্নান যে পাজেরো গাড়িটিতে চড়েন সেটি এমপি জিয়াউর রহমানের নামে আসা ট্যাক্স ফ্রি। পরে এমপি’র কাছ থেকে গাড়িটি তিনি কিনে নেন।

তবে এত সম্পদের উৎস জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান বলেন, আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। দুইটি ইটভাটা করেছি সেটিও ১৮ বছর আগে। আমার কোন অটোরাইস মিল নাই। আর রাজশাহীর ১০তলা ভবন আমার একার নয়, এটি যৌথ মালিকানার। পেট্রোল পাম্প আছে সত্য। বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে বিনিয়োগ করেছি সেটার বিপরীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ২৩ কোটি টাকার ঋণ আছে। ২০২১ সালে এমপি জিয়াউর রহমানের পাজেরো গাড়িটি কিনেছি ৪৬ লক্ষ টাকায়। দুই মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে ভাড়া বাড়িতে থেকে। ২৯ বছর ধরে ঠিকাদারি করছি, আমি টেন্ডারবাজি বা সিন্ডিকেট করিনি এবং এসবে আমি বিশ^াসীও নই।

সর্বশেষ - অপরাধ ও দুর্নীতি