শুক্রবার , ১৬ আগস্ট ২০২৪ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাক্যাম্পের নিরাপত্তা ও সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে

Paris
আগস্ট ১৬, ২০২৪ ৩:৫৩ অপরাহ্ণ

হাসান মোঃ শামসুদ্দীন :

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একটা চলমান গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বৈশ্বিকও আভ্যন্তরীণ চলমান সংকটে রোহিঙ্গা সমস্যার গুরুত্বযাতে কমে না যায় সে জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।যুদ্ধও নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের কারনে রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের পরিমান কমে যাওয়ার পাশাপাশি এর আবেদনও কিছুটা কমে গিয়েছে।এর ফলে সমস্যা সমাধান দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারনকরছে।রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিকেও তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটকেও অন্যান্য সব সমস্যার মত গুরুত্ব দিয়ে এর সমাধানে তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু টাউনশিপে আরাকান আর্মি (এ এ) ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারনে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিহত হয়।চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদেরকেমংডুরথেকেতাড়িয়ে দেয়ার কারনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেআসারজন্যনাফ নদীরতীরেঅপেক্ষাকালেমিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভারীঅস্ত্রেরলক্ষ্যবস্তুতেপরিণতহয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। নাফ নদীর পাড়েএএ’রড্রোনহামলায়আরওঅনেকেআহতহয়েছে।এএ এবংমিয়ানমারসামরিকবাহিনীরমধ্যেসংঘর্ষের সময় ক্রসফায়ারেঅনেক রোহিঙ্গারানিহতহচ্ছে। মিয়ানমারে এএ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।বিজিবির সদস্যদের তৎপরতার কারনে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গাক্যাম্পেআরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায়  গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। নানাসীমাবদ্ধতাসত্ত্বেওবাংলাদেশপ্রায়সাতবছরধরেপ্রায়সাড়ে ১২লাখরোহিঙ্গাকেআশ্রয়দিয়েআসছে।মিয়ানমারেরোহিঙ্গাদেরপ্রত্যাবাসনইএইসংকটেরএকমাত্রটেকসইসমাধান। তবে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করা যায়নি। বাংলাদেশরোহিঙ্গাপ্রত্যাবাসনশুরুরজন্যসংশ্লিষ্টসকলপক্ষেরসাথেযোগাযোগঅব্যাহতরেখেছে।রাখাইনেরোহিঙ্গাদেরআত্মীকরণেরজন্যতাদেরজীবিকারব্যবস্থাউন্নয়নকল্পেবিনিয়োগকরতেআন্তর্জাতিকসম্প্রদায়েরএগিয়ে আসতে হবে। চলমানপরিস্থিতিতেএইসংকট নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পেরনিরাপত্তানিশ্চিতকরারপাশাপাশিনতুনকরেঅনুপ্রবেশঠেকাতেসীমান্তপ্রহরাজোরদারওনজরদারিবাড়াতেহবে।সীমান্ত দিয়ে নতুন করে যাতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে,সে জন্য টেকনাফে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল এবং কড়া নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

জনবহুল বাংলাদেশে সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা ও উদ্বেগের কারণগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকরী সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন শুরু করা দরকার।রাখাইনে চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করা এবং তাদের জোরপূর্বক মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পরিস্থিতিকে অসহনীয় করে তুলেছে যা কাম্য নয়।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং তাদের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৬তম অধিবেশনে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যোগে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সব সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে পেশ করা হয়।আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি ১০ জুলাই জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারে যুদ্ধরত সব পক্ষকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। মিয়ানমার সংঘাতের কারণে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবটিতে মিয়ানমারকে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত বিমসটেক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সুই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং তাঁর সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করে।  তবে চলমান প্রেক্ষাপটে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

গত সাত বছরে রোহিঙ্গাওরাখাইনদের মাঝে সম্প্রীতি সৃষ্টি ও বিভেদ দূর করতে কোন সফল উদ্যোগের কথা জানা যায় নাই। মিয়ানমারসরকারএখনওএইবিষয়েউল্লেখযোগ্যকোনপদক্ষেপনেয়নাই।সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে আশ্রয়নেয়া রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ক্রমেই বাড়ছে। একই ভাবে রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও ভাল নেই। তাদেরকে এএ এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।মিয়ানমার সেনাবাহিনী জাতিগত বিভাজনের জন্য তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সফল হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান আরও জটিল ও দীর্ঘয়িত হচ্ছে। মিয়ানমার সামরিক সরকারের ৭০ বছরের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে।তারা তাদের এই অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করতে দক্ষ। রাখাইন রাজ্যে জান্তা রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্যে করেছিল। এই প্রক্রিয়া এখন ও চলমান রয়েছে।

মিয়ানমারে সাম্প্রতিকসহিংসতাবৃদ্ধি, রোহিঙ্গাদেরজোরপূর্বকসশস্ত্রবাহিনীতেনিয়োগএবংরাখাইনেচলমান সংঘাতের কারনে মিয়ানমারেররোহিঙ্গাদেরবিরুদ্ধেসংঘটিতনৃশংসঅপরাধেরপুনরাবৃত্তিরোধকরারজন্যসকলপক্ষকেকার্যকরীউদ্যোগনিতেহবে।জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে ন্যায়বিচার অর্জন এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

এএ রাখাইনরাজ্যেবসবাসকারীসকল মানুষের প্রতিনিধিত্বকরারদাবিকরলেও২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানের সময় এইসংগঠনটির রোহিঙ্গাদেরবিরুদ্ধেনৃশংসতারঅভিযোগছিল।এএ রাখাইনরাজ্যেবিজয়ীহলেরোহিঙ্গাশরণার্থীদেরপ্রত্যাবাসনসংক্রান্তযেকোনোসিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়েএএ’রউল্লেখযোগ্যপ্রভাবথাকবে।বাংলাদেশরোহিঙ্গাক্যাম্পগুলোরনিরাপত্তানিশ্চিতকরতেকাজকরেযাচ্ছেএবংসীমান্তেপ্রহরাওনজরদারিজোরদারকরেছে। একইভাবে মিয়ানমারপ্রান্তেরাখাইনরাজ্যেরপরিস্থিতিসামালদিতেএএ’কে গুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরতে হবে। রোহিঙ্গাজাতিসত্তাওঅধিকারেরস্বীকৃতিনিশ্চিতকরতেএএ, জাতীয়ঐক্যেরসরকার (এনইউজি) এবংঅন্যান্যজাতিগতসশস্ত্রসংগঠনের (ইএও) সঙ্গেরোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অর্থবহরাজনৈতিকসংলাপশুরুকরতে হবে। চলমান পরিস্থিতিতে বাইরেথেকেধারাবাহিকচাপপ্রয়োগ চলমান রেখে রোহিঙ্গাপ্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।আন্তর্জাতিকসম্প্রদায়, এএও এনইউজি নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে রাখাইনরাজ্যেবসবাসরতরোহিঙ্গাদেরসুরক্ষানিশ্চিতকরার উদ্যোগ নিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গতি আসবে বলে আশা করা যায়।

 

ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এন ডি সি, এ এফ  ডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অবঃ)

মিয়ানমার ও  রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ - মতামত