সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ধর্ম নিয়ে কথার যুদ্ধ চলছে। শিয়াপ্রধান ইরান ও সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না।
সৌদির প্রধান ইমাম ‘ইরানিরা মুসলিম নয়’ বলে মন্তব্য করার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেছেন, সৌদি আরব ‘অন্ধ উগ্রতাবাদ’ ছড়াচ্ছে।
এ বছর ইরানিরা হজে যাচ্ছে না। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা বর্তমানে কথার যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
সৌদি আরবের প্রধান ইমাম আবদুল আজিজ আল-শেখের মন্তব্যের জবাবে জাভাদ জারিফ বলেন, ‘ইরানি ও অধিকাংশ মুসলিম যে ইসলাম ধর্ম পালন করে তার সঙ্গে ওহাবাবি মতবাদের ধর্মীয় নেতা ও সৌদির সন্ত্রাসীর ওস্তাদদের ধর্মমতের কোনো মিল নেই।’
গত বছর হজে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া চার শতাধিক ইরানির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বুধবার দেখা করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরান দাবি করে, গত বছর হজে পদপিষ্ট হয়ে মারা যায় ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি হাজি। যদিও সৌদি সরকারের হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ৮০০।
সোমবার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সৌদি কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, হাজিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সৌদি আরব।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, গত বছর আহত হাজিদের উদ্ধার করে নিরাপত্তা দিতে সৌদি আরব ব্যর্থ হয়েছে। তার দাবি, ‘সৌদি আরব তাদের হত্যা করেছে।’
প্রায় তিন দশক পর এ বছর হজ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইরানের দাবি, নিরাপত্তা ও আইনগত বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে কোনো চুক্তি না হওয়ায় ইরানিদের হজে যেতে দেয়নি তারা।
শনিবার হজের আনুষ্ঠাকিতা শুরু হচ্ছে। এর আগে শুরু হয়েছে দুই দেশের উত্তপ্ত বাক্য বিনিয়ম।
ইরানের সর্বোচ্চা ধর্মীয় নেতা খামেনি সৌদি আরবের রাজপরিবারকে ‘ছোট ও পুচকে শয়তান’ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘তারা বড় শয়তানের (যুক্তরাষ্ট্র) স্বার্থরক্ষা নিয়ে ভয়ে কাঁপে।’ সৌদি আরবের ব্যবস্থাপনায় আর যাতে হজ না হয়, সেজন্য বিশ্বের মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
খামেনির এ বক্তব্যের জবাবে মঙ্গলবার সংবাদপত্র মক্কা ডেইলিকে প্রধান ইমাম আবদুল আজিজ আল-শেখ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে, তারা (ইরানিরা) মুসলিম নয়। তারা পারসিক পুরোহিতদের সন্তান। মুসলিমদের প্রতি তাদের বিদ্বেষ আছে এবং তা বহু পুরোনো।’
পারসিক পুরোহিত বলতে ‘জরুথুস্ট্রের ধর্মমত অনুসারীদের’ বোঝানো হয়। ফারসি ধর্মগ্রন্থ জেন্দাবেস্তা (জেনদ-আবেস্তা) অনুযায়ী, তারা ছিলেন অগ্নি-উপাসক। এ ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরে ইরানিদের অনেকে আক্রমণও করে থাকেন, সৌদির প্রধান ইমান যেমন করেছেন।
আঞ্চলিক রাজধানী ও অর্থনীতিতে প্রভাব দেখাতে গিয়ে দুই দেশ প্রায়ই বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। যেমন- সিরিয়া গৃহযুদ্ধে দেশটির সরকারকে সমর্থন করে ইরান আর বিদ্রোহীদের সমর্থন করে সৌদি আরব। অন্যদিকে ইয়েমেন গৃহযুদ্ধে হুতিদের সমর্থন করে ইরান, উল্টো দিকে সরকারকে সমর্থন করে সৌদি আরব। জ্বালানি তেলের উৎপাদন নিয়েও দুই দেশের বিপরীতমুখী অবস্থান বিদ্যমান।
সূত্র:রাইজিংবিডি