নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী গোদাগাড়ীতে রাস্তার কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় চারজনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় রিশিকুল ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য ফিরোজা বেগম দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে ওই মামলাটি দায়ের করেন। এরই মধ্যে পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে পুলিশ ওয়াসিম নামে এক যুবককে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতেও প্রেরণ করে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শল্লা হতে বিলদুবইল পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় এমপির আওতায় থাকা প্রকল্প থেকে ১৪ টন চাল বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ওই কাজের বিপরীতে নারী সদস্য ফিরোজা বেগমকে সভাপতি করে এ বরাদ্দটি দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়ার পরপরই ওই সদস্যকে অর্ধেক চাল উত্তোলনেরও অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর সেই চাল বিক্রি করে অধিকাংশই টাকায় লোপাট করেন ফিরোজা বেগম। কিন্তু রাস্তার সংস্কারকাজ করতে গিয়ে মাটি না ফেলে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি উল্টা-পাল্টা করে সংস্কার দেখানোর চেষ্টা করেন তিনি। রাস্তায় মাটি ভরাট না করে ট্রাক্টর দিয়ে চাষের মাধ্যমে প্রকল্পের টাকা আত্মনসাতের চেষ্টাটি ধরে ফেলেন এলাকাবাসী। এরপর এলাকাবাসী স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলুকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবগত করেন। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে অভিযোগ করেন। এরপর কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গোদাগাড়ীর সৈয়দপুর গ্রামের চেরু, সিজার, রাসেল, মোবারক হোসেন, খন্দকার দুলাল ফকির, আতাউর রহমানসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে জানান, রাস্তার কাজ বন্ধ থাকা অবস্থায় গত ৬ জানুয়ারি ইউপি সদস্য ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধেই গোদাগাড়ী থানায় একটি চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ করেন। চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম টুলুর সহযোগিতায় অভিযোগকারী সেলিম, ওয়াসিম আল রাজি, আতাহার আলাী এবং নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করেন। এরপর মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় কাঁকনহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আলহাজকে। গত ১২ জানুয়ারি এসআই আলহাজ ঘটনাস্থ পরিদর্শন করে বিষয়টি আপোষ-মীমাংসার জন্য এলাকাবাসীকে পরামর্শ দিয়ে আসেন। কিন্তু পরের দিন ১৩ জানুয়ারি রাতে ওয়াসিমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরলাকাবাসী অভিযোগ করে আরো জানান, এসআই আলহাজ অতিউৎসাহী হয়ে কোনো তদন্ত ছাড়ায় ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। শেষ সাতদিন জেল খাটার পরে গত ২০ জানুয়ারি জামিন মঞ্জুর হয় ওয়াসিমের। এরপর গত ২১ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি।
স্থানীয় নুরুজ্জামানসহ আরো অনেকে বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসীর অনেকেই ওই রাস্তা সংস্কারের নামে ানিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। কিন্তু উল্টো আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে। এটা আইনের চরম লঙ্ঘন। এলাকাবাসী তাদের স্বার্থের জন্য প্রতিবাদ করে এখন নিজেরাই বিপদে পড়েছে। পুলিশ এখনো ওই মামলায় সাধারণ মানুষদের হয়রানি করে যাচ্ছে। অনেকের নিকট থেকে এসআই আলহাজ টাকাও দাবি করছেন। টাকা না দিয়ে চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এতে চরমভাবে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী।
তবে কাঁকনহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই আলহাজ বলেন, ‘সবাইকে বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু চাঁদাবাজি মামলা হওয়ায় ওসি স্যারের নির্দেশে আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি।’
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ সঠিক কি না তা তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাস্তার কাজের প্রতিবাদে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সেটি কর্তৃপক্ষ দেখবে। আমাদের এখানে কিছু করার নাই।’
এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বাশির বলেন, ‘ওই প্রকল্পের বিপরীতে বেশকিছু চাল এরই মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু কাজটি নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানতাম না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটি সঠিক হয়নি।’