সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করছেন পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মুহিব্বুর রহমান মুহিব। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের পানি নিষ্কাশনের এ খালটি ভরাট করার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খালের স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দখলদারদের হাত থেকে এ খালটি উদ্ধারে এর আগে স্থানীয়রা অনেক আন্দোলনও করেছে। এমপি মুহিব অবশ্য স্বীকার করেছেন বিষয়টি। বলেছেন, ভবনের পাইলিং করার সময়ে মাটি ভুলবশত খালে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাটি অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা এমপি মুহিব বলেন, ‘২-৪ দিনের মধ্যেই সব মাটি সরিয়ে নেয়া হবে।’
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেছেন, ‘খালে ফেলা মাটি অপসারণে ২৪ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাটি সরানো না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমরা।’ এবারই প্রথম পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে এমপি নির্বাচিত হন মুহিব। এমপি হয়েই পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখলের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে বিষয়টির সামাধান হয় জেলা প্রশাসন এবং ভূমি দফতরের হস্তক্ষেপে।
পরে ওই জমি ছেড়ে কথিত নিজের জমিতে সিমানা দেয়াল করেন মুহিব। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার খাল ভরাটের অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে। সরেজমিন কলাপাড়া পৌর শহরে দেখা যায়, শহরের এতিমখানা গোরস্থান সংলগ্ন এলাকায় চলছে এমপি মুহিবের বাড়ি নির্মাণের কাজ। টিনের বেড়াঘেরা ৬ শতাংশ জমির ওপর ভবনের পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাইলিংয়ের ওই মাটিই শহরের একমাত্র খালে ফেলা হয়েছে।
খালটি কোথাও এতিমখানা খাল, কোথাও রহমতপুর খাল হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ‘সমুদ্র মোহনায় থাকা আন্ধারমানিক নদ কলাপাড়া পৌরশহর ঘেঁষে গিয়ে মিশেছে রামনাবাদ নদীতে। আন্ধারমানিক নদের কলা হাটখোলা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে এই রহমতপুর খালটি কলাপাড়া পৌর শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এর একটি শাখা পশ্চিম দিকে জগন্নাথ আখড়াবাড়ির পাশ দিয়ে গেছে রহমতপুরের দিকে।
অন্য শাখাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পেছন দিক দিয়ে চলে গেছে টিয়াখালি ইউনিয়নের দিকে। খালের প্রথম শাখা রহমতপুর অংশটি চলে গেছে এমপি মুহিবের নির্মাণাধীন বাড়ির পেছন দিক দিয়ে। আর এই খালই মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। অথচ ভবনের সামনে অনেক খালি জমি রয়েছে। পাইলিংয়ের মাটি ওই খালি জায়গায় রাখা যেত অনায়াসেই।’
কলাপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ‘আমার বাসা এমপি সাহেবের বাসার ঠিক পশ্চিম পাশে। ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল গর্ত করার কারণে এরই মধ্যে আমার ভবনের সীমানা দেয়ালে ফাটল ধরেছে।’ খাল ভরাট প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কলাপাড়া পৌর শহরে পানি নিষ্কাশনের জন্য এই একটিমাত্র খালই রয়েছে। দখলপ্রবণতার কারণে এরই মধ্যে খালটি প্রস্থে অনেক ছোট হয়ে গেছে।
তার ওপর এখন আবার এমপি সাহেবের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে মাটি ভরাটের কারণে খালটি মৃতপ্রায় অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। খালটি বাঁচাতে অনেক সংগ্রাম করেছি। খাল ভরাট কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। খালটি অচল হয়ে গেলে কলাপাড়া পৌর শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কাই কেবল নয়, বদ্ধপানিতে মশা জন্ম নেয়াসহ নানা রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়বে পুরো এলাকায়।’
কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল হাওলাদার বলেন, ‘এমপি সাহেব তার বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫ তলার একটি প্ল্যান পৌরসভা থেকে পাশ করিয়ে নিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ভবনের সামনে ৫ ফুট এবং ৩ দিকে ৩ ফুট করে জায়গা খালি রেখে ভবন তুলবেন তিনি। খাল দখল বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। কারণ সরকারি সম্পত্তি হিসেবে খাল দেখভালের দায়িত্ব তাদের। তবে খাল ভরাটের বিষয়টি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পৌরসভার একজন সহকারী প্রকৌশলী ওই নির্মাণকাজ তদারকি করছেন। প্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, সেটি তিনি দেখছেন। খালের বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’
সরকারি খালে মাটি ফেলে ভরাট করার বিষয়ে জানতে চাইলে কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, ‘খাল ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদেরকে খালে মাটি ফেলতে নিষেধও করা হয়েছে। সর্বশেষ আজ (সোমবার) সকালেও আমি সেখানে গিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালে ফেলা মাটি অপসারণ করে খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মাটি অপসারণ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এমপি মুহিব বলেন, ‘ভবন নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদার ভুল করে কাজটি করেছে। জানার পর তাকে খালে মাটি ফেলতে নিষেধ করেছি। এরই মধ্যে মাটি সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। খালের জোয়ার-ভাটাও ঠিক মতো চলছে। ২-৪ দিনের মধ্যে সব মাটি সরিয়ে ফেলা হবে। এমনিতেও খালে মাটি ফেলে রাখব না আমরা। বেইজ মেন্টের কাজ শেষ হলে সেখানে এই মাটি ফেলে ভরাট করা হবে। পুরো বিষয়টিই একটা ভুল বোঝাবুঝি। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার খাল দখল করার প্রশ্নই আসে না।’