শুক্রবার , ৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কমলার পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা

Paris
নভেম্বর ৮, ২০২৪ ৯:১৮ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে সাফল্যের পথে নতুন করে বাধা সৃষ্টি করল ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পরাজয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ঘটনা, যেখানে একটি প্রধান রাজনৈতিক দল নারী প্রার্থী মনোনীত করেছে এবং দ্বিতীয়বারেও তারা পরাজয়ের মুখ দেখেছে।

কমলা হ্যারিসের পরাজয়ই মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই ২০১৬ সালে কথা, যখন হিলারি ক্লিনটনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

এডিসন রিসার্স এক্সিট পোলের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক সংকট ও আর্থিক নিরাপত্তার উদ্বেগই ছিল কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের মূল কারণগুলোর একটি। তবে লিঙ্গ বৈষম্যও একটি বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে এখনও।

বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ১৩টিতে নারী সরকার প্রধান রয়েছেন। আর ১৯৯০ সাল থেকে এই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দেশটির জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই নারী এবং ৪২ শতাংশ বিভিন্ন বর্ণের মানুষ। আর আমেরিকান নারীরা আয়-উপার্জন এবং সরকার ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও ঢের এগিয়ে।

তবুও অক্টোবরে চালানো রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ ভোটারই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গ বৈষম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। অন্যদিকে নারী প্রেসিডেন্টের প্রতি অনিহা প্রকাশ করেন ১৫ শতাংশ ভোটার।

কংগ্রেস ও রাজ্যপাল

পিউ গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৪ মেয়াদে মার্কিন কংগ্রেসে নারী সদস্যের হার ছিল ২৮ শতাংশ, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া ২৫ শতাংশ আইনপ্রণেতা কৃষ্ণ বর্ণের, হিস্পানিক, এশিয়ান আমেরিকান, আমেরিকান ইন্ডিয়ান, আলাস্কা নেটিভ বা বহুজাতিক।

আমেরিকান ওমেন অ্যান্ড পলিটিক্স সেন্টার জানিয়েছে, ১১৭তম কংগ্রেসে ১৪৩ জন নারী সদস্যের মধ্যে ৪৯ জন বা ৩৪.৩ শতাংশই বিভিন্ন বর্ণের নারী।

১৯৭৫ সালে এল্লা গ্রাসো প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ৪৯ জন নারী গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে- সাসানা মার্টিনেজ, মিশেল লুজান গ্রিশাম এবং নিকি হ্যালি নামের তিনজন নারী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে কোনো কৃষ্ণ বর্ণের নারী গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হননি।

আমেরিকার ইতিহাসে প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই পুরুষ। এদের মধ্যে আবার ২০০৮ সালে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি ছিলেন।

এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে তিনিই হতেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত নারী প্রার্থী হিসেবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে অনেক বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তবে তিনি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

এছাড়াও হ্যারিস ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০২১ সালে জো বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে, ১৯৮৪ সালে জেরালডিন অ্যান ফেরারো প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন।

বেতন বৈষম্য

বিংশ শতকে লিঙ্গ ও বেতন বৈষম্য বন্ধ করার দিকে অগ্রগতি হলেও একুশ শতকে এসে তা ধীর হয়ে যায়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, ১৯৮২ সালে পুরুষের প্রতি ডলার উপার্জনের বিপরীতে নারীরা পেতেন ৬৫ সেন্ট করে; ২০০২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা অবশ্য ৮০ সেন্টে উন্নিত হয়।

তবে ২০২৩ সালে নারীরা সারা বছর পূর্ণকালীন চাকরি করেও পুরুষের প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮৪ সেন্ট করে উপার্জন করেছে। অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা প্রতিটি শ্বেতাঙ্গ পুরুষের প্রতি ডলারের বিপরীতে ৬৯ সেন্ট উপার্জন করেছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের নতুন রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়।

শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য

ন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন স্টাডিজের তথ্য অনুসারে, ১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টার জানায়, ২০১৯ সালে মহামারির পরে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে নারীরা এখন কলেজ-শিক্ষিত কর্মশক্তির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।

গর্ভপাত অধিকার

কমলা হ্যারিস ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ৯ বছর পরে রো বনাম ওয়েড মামলায় গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে ফেডারেল সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

২০২২ সালের জুনে সুপ্রিম কোর্ট সেই সুরক্ষা বাতিল করে, যা এখন অর্ধেকেরও বেশি রাজ্যে গর্ভপাতের অধিকার সীমিত করে দিয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের চারটি দেশের মধ্যে একটি, যারা গর্ভপাতের অধিকার সীমিত করেছে।

সিইও এবং বোর্ডরুমে নারীর অংশগ্রহণ

২০২৪ সালে ফরচুন ৫০০ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ এবং বোর্ড সদস্যদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া এস অ্যান্ড পি ৫০০ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ৩৪ শতাংশ নারী রয়েছেন। যা ২০১৪ সালের ১৯ শতাংশ থেকে বেড়েছে।

২০২৩ সালের ম্যাকিন্সি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ বা তার বেশি নারীর নেতৃত্বে থাকা কোম্পানিগুলো নারী নেতৃত্বহীন কোম্পানির তুলনায় বেশি সফলতা অর্জন করেছে।

মাতৃমৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের মাতৃমৃত্যুর হার অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে কমনওয়েলথ ফান্ডের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮০ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য। তবে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের গর্ভধারণজনিত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। যা মূলত দীর্ঘস্থায়ী রোগ, কাঠামোগত বর্ণবাদ এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার অভাবের জন্য দায়ী।

সিডিসি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং কাঠামোগত বর্ণবাদের কারণে এই সমস্যাটি আরও জটিল হয়েছে।

পরিশেষে বলা হয় যে, কমলা হ্যারিসের পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেতৃত্বের সুযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের ইঙ্গিত দেয়। যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো নারীদের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে চলেছে।

 

সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক