শনিবার , ২৭ আগস্ট ২০১৬ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আস্থা রাখুন, কোনো ক্ষতি হলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতাম না

Paris
আগস্ট ২৭, ২০১৬ ১০:৪৮ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এদেশের স্বাধীনতা এনেছি। আমরাই এ দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। কাজেই এতটুকু আস্থা আমার ওপর রাখা উচিৎ। কোনো ক্ষতি হলে আমি অন্তত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতাম না।

শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‍রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় সরকার সবদিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে জার্মানির একটি ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো আপোস করবো না।

তিনি বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনার তথ্য তুলে ধরে বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন গ্যাস-এসিড নিঃসরণে উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বসানো হবে। বাতাসে ওড়া ছাই ধরে রাখার ব্যবস্থা হবে। এই ছাই আবার সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহার হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে।

তিনি জানান, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য যেসব গ্যাস সামান্য পরিমাণে বের হবে সেগুলোর ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি মাত্রার চেয়ে অনেক কম হবে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করে বলে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘুরে আসেন। বড়পুকুরিয়া একটা সাব-ক্রিটিক্যাল। সাব-ক্রিটিকাল ও আলট্রা-সুপারক্রিটিকাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০০০ সালে কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া সেটা বন্ধ করেননি। তখন কোনো মায়া কান্নাও ছিলো না। আপনারাও লিখতে পারেননি কোনো ক্ষতি হয়েছে। তাহলে এটা নিয়ে কেন কথা হচ্ছে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনার পাল্টা সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নবিরোধী একটি মহল মানুষকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আমরা এতোদিন খোঁজার চেষ্টা করছিলাম এর পেছনে শক্তিটা কোথায়? এতদিন পরে আমরা দেখলাম, খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে এই অপপ্রচারে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করার নামে খাম্বা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুট করেছিলো। আরা আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। সেটা দিয়ে আলো জ্বলে-এসি চলে, সেখানে বসে আমাদের সমালোচনা হয়।‘

তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সুন্দরবন রক্ষা করা, বাঘ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করায় এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো যে এলাকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে তা থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, পরিবহন সহজলভ্যতা ও বসত-বাড়ি স্থানান্তর প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে অজ্ঞতাবশত সমালোচনা করছেন। যারা সমালোচনা করছেন, বিশেষ করে যখন বিএনপি নেত্রী যখন কথা বলেন, তখন আমার মনে হয় মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া কোল পাওয়ার প্লান্ট, ভিয়েতনামের কুয়াং নিন বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাপানের ইয়াকোহোমার ইসোগো বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাইওয়ানের তাইচুং বিদ্যুৎকেন্দ্র, জার্মানির জলিং বিদ্যুৎকেন্দ্র, হেইলব্রোন হ্যাফেন বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্রাফটওয়ার্ক-মুরবার্গ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নদী ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বলেন, এরা নিজেরা ভালো কিছু করতে পারে না। আবার কেউ ভালো কিছু করতে গেলে তাতে বাধা দেয়। রামপালে সুন্দরবনের কথা বলে বিরোধিতা করছে। কিন্তু আনোয়ারায় সুন্দরবন নেই। কিন্তু সেখানেও বিরোধিতা করছে কেন? এদের কথা শুনতে গেলে তো কোনো উন্নয়ন কাজেই হাত নেওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী এসময় আন্দোলনকারীদের রোর্ড মাচসহ নানা কর্মসূচির অর্থ যোগানের বিষয়েই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, এই যে শত শত মানুষ জড় করে রোডমার্চ করে, সমাবেশ করে, এগুলো করতে টাকা কে দেয়?

শেখ হাসিনা বলে, আপনারাই দেশপ্রেমিক, সুন্দরবনপ্রেমিক। আপনারাই শুধু পরিবেশ বোঝেন, আর আমরা কিছুই বুঝি না! একটা কথা বলে রাখি। যদি এই সুন্দরবন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনে সামান্যতম ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকতো, তাহলে আমিই সুন্দরবনের বিরোধিতা করতাম।

প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন রক্ষায় তার সরকারের কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবনের আয়তন দিন দিন বাড়ছে। গাছের ঘনত্ব বাড়ছে। উপকূল এলাকায় সুবজবেষ্টনী সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন জেগে ওঠা চরে গাছ লাগিয়ে সেগুলোর ভূমিক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সবসময় উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেছে। জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। সরকার জনগণের সেবক, এটা আওয়ামী লীগই কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি দেশের উন্নয়নের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বলেন, গুলশান হলি আর্টিজানে মানুষ খুন করেছে জঙ্গিরা। সেখানে পাওয়া গেলো মেট্রোরেল নির্মাণকর্মীদের। বাংলাদেশকে যখন সবাই বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে, সেই উন্নয়নকে থামিয়ে দেওয়াই যেনো উদ্দেশ্য ছিলো তাদের। সেই হত্যাকারী আর এদের সঙ্গে আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়াই যেনো তাদের উদ্দেশ্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম।

শুরুতেই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তারপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনের নিকটবর্তী বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’।

প্রকল্পে সহায়তা করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের জন্য ৪৩০ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া চলছে প্রাথমিক অবকাঠামোর কাজ।

পরিবেশের বিশেষ করে সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে এমন বক্তব্য সামনে এনে বিভিন্ন সংগঠন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতা করছে। বামপন্থি দলগুলোর এই বিরোধিতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।

সূত্র: বাংলানিউজ

সর্বশেষ - জাতীয়