সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় দেশের ১১টি জেলার অর্ধকোটি মানুষ এখন বানভাসি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে সরকারের তরফে। যদিও যোগাযোগ বিঘ্নের কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে চলছে ত্রাণতৎপরতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ সবাই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। আগের তুলনায় বৃষ্টিপাত কমে আসায় বন্যার পানি কোথাও স্থিতিশীল, আবার কোথাও কোথাও কমতে শুরু করেছে। গত চারদিন ধরে ভাসছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।
চিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিতেই সীমাবদ্ধ আছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, আমরা এমন পূর্বাভাস পেয়েছি। আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে হবিগঞ্জ মৌলভীবাজারের মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের বরাতে আলী রেজা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এই সময়ে এই অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফেনী, গোমতী, হালদা- এই নদীগুলোর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বন্যায় চট্টগ্রামে ৫ জন, কুমিল্লায় ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে একজন করে মারা গেছেন। বন্যার্তদের জন্য ফেনীতে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সমন্বিতভাবে পরিচালনা করছে। বন্যাপীড়িতদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। মোট ৩৫২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, আশ্রিতের সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশু নিয়ে আসা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা জানান- চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী জেলায় চলমান বন্যা কার্যক্রমে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, ছাত্র প্রতিনিধিরা, বিজিবিসহ সবাই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, বন্যাদুর্গত ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ টন। এ ছাড়া ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। শিশুদের খাবারের জন্য ৩৫ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।