বুধবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

অবহেলায় পুঠিয়ার পঙ্গু নিকেতন, প্রতিবন্ধকতার মধ্যে শিক্ষা ও সেবা দান

Paris
সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৬ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

শাহিনুল ইসলাম আশিক:
অজ পাড়া গাঁ, নেই তেমন সুযোগ-সুবিধা। যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল। এই এলাকায় একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্র। কিন্তু সরকারিভাবে যে অনুদান দেয়া হয়, তাতে প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমসিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
রাজশাহী থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে পুঠিয়ার উত্তর-পূর্ব দিকের ৫নম্বর শিলমারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধনপুর এলাকা। গ্রামটি পদ্মার শাখা নদী বড়ালের ধারে নিরিবিলি এলাকায়। সেই নদীর পশ্চিমে গড়ে তোলা হয়েছে পঙ্গু শিশুদের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পঙ্গু শিশু নিকেতন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুল যেখানে ছেলেরা বিনা খরচে শিক্ষা নিচ্ছে।
14389951_635938939903625_651106073_n-copy
এখানে বেইল পদ্ধতিতে প্রায় ১০ থেকে ১৫জন শিশু কিশোরকে লেখাপড়া শেখানো হয়। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে খরচ বাবদ কোন প্রকার টাকা পয়সা দিতে হয় না। পাশেই রয়েছে পঙ্গু শিশু নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পঙ্গু শিশু নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়, পঙ্গু শিশু নিকেতন ডিগ্রি কলেজ, পঙ্গু শিশু নিকেতন সমন্বিত বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ (বিএম শাখা) চালু করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এটি বাংলাদেশের এক মাত্র পঙ্গু বিএম কলেজ। এখানে বিভিন্ন পঙ্গুু ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগ্রহণ করেন। জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের দিকে আবদুল করিমের বড় মেয়ে বেবী বালি পঙ্গু (প্রতিবন্ধী) অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন।
তাকে দেশে বিদেশের নানা প্রান্তে চিকিৎসা দেয়া হলেও তাতে লাভ হয় নি। অবশেষে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সেই সময় বাবা আবদুল করিম মনে করেন পঙ্গুদের জন্য কিছু করতে হবে। পাশের এলাকার পঙ্গু বাবু শিবনন্দ্রনাথ শীলকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন একটি হোমিও চিকিৎসালয়।
মাটির দোচালা ঘরে দিয়ে শুরু করেন এলাকার মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা। সেই থেকে শুরু হয় পথ চলা। হোমিও চিকিৎসায় থেকে শুরু করে একের পর এক তৈরি করা হয় পঙ্গুদের শিক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসার সুব্যবস্থা।
আবদুল করিম সেই সময় ২৫ বিঘা জমি পঙ্গুদের জন্য দান করেন। তারই দানের প্রেক্ষিতে গড়ে তোলা হয় বিদ্যালয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। তার বেশ কিছুদিন পরে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পরে ছেলে আবদুল মজিদ পর্যায়ক্রমে জমি কিনেন।
বর্তমানে এই জমির পরিমাণ এখন সর্বমোট ৮০ বিঘা। এখানেই রয়েছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ তো গেল শিক্ষার কথা। এখানে রয়েছে একটি পঙ্গু হাসপাতাল। পঙ্গু শিশুদের জন্য ফিজিও থেরাপি ও ইলেকট্রো থেরাপির ব্যবস্থা। এই পৃথক দুই চিকিৎসার জন্য রয়েছে দুজন চিকিৎসক। পঙ্গু শিশুদের এখানে হোমিও ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা দেয়া হয়।
14388813_635938929903626_1988195364_n-copy
এখানে পঙ্গুদের জন্য সেলাই ও সকলের জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে পঙ্গু নারী পুরুষ মিলে প্রায় ৫০ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনের জন্য সরকারিভাবে প্রতি মাসের জন্য দেয়া হয় ৩৫০টাকা হারে। আর বাকিদের খাবার দিতে হয় এই পঙ্গু নিকেতন থেকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য এতোগুলো প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে তাতে সরকারিভাবে তেমন সাহায্য সহাযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে ধুঁকে ধুঁকেই চলছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। গতবছরের প্রথমের দিকে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে পঙ্গু শিশু নিকেতন সমন্বিত বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ বিএম শাখায় দেয়া হয়েছে চেয়ার টেবিল।
এখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে দেয়া হয় সরকারিভাবে বেতন ভাতা। আর বাকিদের চালায় পঙ্গু শিশু নিকেতন কর্তৃপক্ষ। এখানে আয়ের উৎস বলতে, সাতটি পুকুর ও একটি ধান ভাঙানো মিল। আর বাকিগুলো আবাদি জমি হিসেবে রয়েছে। এ থেকে বছরে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে এখানকার পঙ্গু শিশুদের লেখাপড়া ও চিকিৎসাসেবা।
14397360_635939536570232_912379219_n-copy
পঙ্গু শিশু নিকেতন বিএম কলেজের শিক্ষক দিলীপ কুমার শীল এ প্রতিবেদককে বলেন, এখানে সরকারিভাবে তেমন সাহায্য-সহাযোগিতা করা হয় না। তবে এই এলাকায় পঙ্গু শিশু নিকেতনের নামে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যা এই এলাকার শিক্ষার মানকে বেগবান করেছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়া হয় না। তাদের বইখাতা ফ্রি সরবরাহ করা হয়।
আবদুল করিম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেন, সরকারিভাবে তেমন কিছু দেয়া হয় না। পঙ্গু শিশুদের যে সহায়তা করা হয় তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এতে করে এই সীমিত অনুদান নিয়ে আমাদের চালাতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরেও চালাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে যে অনুদান এখানে আসে তা আমরা ঠিক মত পাই না। আবার পেলে বিভিন্ন সেক্টর ঘুরে আমাদের কাছে আসতে আসতে তার পরিমাণ কমে যায়। এখনে আমাদের যে কিছু উৎস আছে যেমন পুকুর, ধানি জমি ও বিভিন্ন ফলের গাছ ইত্যাদি। তারপরেও কমতি হলে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি (ডোনার) সাহায্য করে থাকেন।
স/আ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর