মাঠ থেকে বিদায় নিতে না পারার দুর্ভাগ্যে অনেকেরই ক্যারিয়ার শেষ হয়। এই বাংলাদেশেও কত কীর্তিমানকে যে দল থেকে বাদ পড়ার পর অঘোষিত অবসরে চলে যেতে হয়েছে! তাঁদের তুলনায় মাহমুদ উল্লাহকে ‘সৌভাগ্যবান’ বলতে গিয়েও থামতে হয়, টানা যায় না উপসংহারও।
যায় না, কারণ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেও এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাই এখনো দেননি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তা দিতেও যে অদৃশ্য এক বাধার দেয়াল তুলে তাঁর সামনে দাঁড় করানো আছে, সেটিও এত দিনে ‘ওপেন সিক্রেট’! এমনিতে অবসর নেওয়ার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের নিজের সিদ্ধান্তকেই শেষ কথা বলে ধরে নেওয়ার কথা। তা মাহমুদের সতীর্থরা ধরে নিলেও দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসন এখনো নয়।
নয় বলেই এখনো তাঁর অবসরে ‘অনুমোদিত নয়’ সিল-ছাপ্পড়ই মেরে রাখা আছে। মাহমুদ নিজেও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোথাও মুখ খোলেননি। না সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের ভেরিফায়েড পেজে, না সংবাদমাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগের দিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই নিয়ে জিজ্ঞাসার মুখে শুধু এটুকুই বলেছিলেন, ‘আশা করি, বিষয়টি নিয়ে আপনারা শিগগিরই জানতে পারবেন। আপাতত এই সিরিজেই মনোযোগ রাখতে চাইছি।’
সেই সিরিজ দোর্দণ্ড প্রতাপে জেতার পর কাল থেকে মাঠে গড়িয়ে গেল নিউজিল্যান্ড সিরিজও। এর প্রথম ম্যাচের মাঝবিরতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানের বক্তব্যেও স্পষ্ট যে অবসর নিয়েও আসলে ‘নেননি’ মাহমুদ উল্লাহ। কারণ তাঁর সিদ্ধান্ত এখনো মেনে নিতে পারেননি নাজমুল। তাই অনুমোদন না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছেন। মাহমুদ টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন নাকি নেননি, এমন প্রশ্নের জবাব বিসিবি সভাপতি এক কথায় দিয়েছেন এভাবে, ‘নেয়নি।’
অথচ গত ১১ জুলাই হারারে টেস্টের শেষ দিনের খেলা শুরুর আগে সতীর্থরা মাহমুদকে বিদায়ি ‘গার্ড অব অনার’ দিয়েছেন। গত বছরের শুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাজে শটে আউট হওয়ার পরই দলে জায়গা হারানো এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ফেরেন হারারের ওই ম্যাচ দিয়েই। দলের বিপর্যয়ের মুখে ১৫০ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদ ওই ম্যাচের তৃতীয় দিন বিকেলে সতীর্থদের জানান টেস্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্তের কথা। তা নিয়ে সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনে ছড়িয়ে পড়া অসন্তোষে মাহমুদও চেপেই রাখেন বিষয়টি।
অবসর নিয়েও নিতে না পারার বিষয়টি এমন বিরল যে এক তারকা ক্রিকেটারকে এমনও বলতে শোনা গেছে যে, ‘জীবনে কখনো এই জিনিস দেখিনি যে কেউ অবসর নিতে চাইছে, কিন্তু নিতে পারছে না।’ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটির সুরাহা হওয়ার জন্য নাজমুল-মাহমুদ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে হবে আগে। সে জন্যই কিনা নাজমুল বলে রাখলেন, ‘‘আসলে একের পর এক সিরিজ হচ্ছে। ওর সঙ্গে বসারও সুযোগ হয়নি। বিষয়টি তাই ‘পেন্ডিং’ আছে।’’
জিম্বাবুয়েতে যাওয়ার আগেই মাহমুদের সব ফরম্যাটে খেলার লিখিত সম্মতি দিয়ে যাওয়ার পুরনো অভিযোগও নতুন করে করলেন নাজমুল। তাঁর কাছে বিষয়টি ‘অপ্রত্যাশিত’ ছিল জানিয়ে এ-ও বলতে বাদ রাখলেন না, ‘রিয়াদ যা করেছে, কোনো পেশাদার ক্রিকেটার তা করতে পারে না।’
সেই ক্ষোভ থেকেই সম্ভবত মাহমুদ উল্লাহর অবসর এখনো অনুমোদনহীন!