সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: চুরি বা অন্য কোনো অপরাধের ধারণায় কোনো ব্যক্তিকে প্রহার বা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অনুমতি ইসলামী শরিয়তে নেই, বিশেষত প্রহারকারী যখন সন্দেহভাজন ব্যক্তির আইনানুগ অভিভাবক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হয়। কিন্তু সমাজে চুরির সন্দেহে মানুষকে প্রহার করার বহু ঘটনা ঘটে। এমন ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনে যারা শিশু এবং শাস্তি দানের অনুপযুক্ত তাদেরও প্রহার করার ঘটনা ঘটে। প্রহারে প্রাণহানির ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মহানবী (সা.)-এর হুঁশিয়ারি: যার সম্পদ চুরি হয় স্বাভাবিকভাবে তার মনে নানা রকম চিন্তার উদয় হয়। ফলে ধারণা ও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সে এমন সব অপরাধ করে বসে, যা চুরির চেয়ে জঘন্য। মহানবী (সা.) এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যার জিনিস চুরি হয়, সে ধারণা ও অনুমান করতে করতে চোরের চেয়েও অগ্রসর হয়ে যায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১৩০১)
শয়তানই উত্তেজিত করে: বান্দারা আল্লাহ ও বান্দার পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ করবে- এটাই মহান আল্লাহর প্রত্যাশা। কিন্তু শয়তান মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে, এমনকি গুরুতর অপরাধে লিপ্ত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করতে চান, আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও। আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে চান। কেননা মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৭-২৮)
সমস্যার মূলে গুজব : মানুষকে চোর বা অন্য কোনো সন্দেহে বেদম প্রহার করার মূলে থাকে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গুজব। ইসলাম গুজবের অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তা যাচাই করো, অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৬)
অন্যের ক্ষতির কারণ না হই: নিজের অজান্তেই আমরা অনেক সময় মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে যাই। যেমন- যাচাই না করেই কোনো সংবাদ প্রচার করি। আর তা মুখে মুখে ছড়িয়ে একসময় মানুষের জীবননাশের কারণ হয়। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৯২)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তরের প্রতিটির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)। সুতরাং মুসলমানের দায়িত্ব হলো, কারো ব্যাপারে সন্দেহ হলে সমাজে আতঙ্ক না ছড়িয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা।