সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে ব্যবহৃত অর্ধশত অস্ত্রের হদিশ মিলছে না

Paris
নভেম্বর ১৮, ২০২৪ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে ব্যবহৃত অন্তত অর্ধশত অবৈধ অস্ত্রের হদিশ মিলাতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ তাদের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় এসব অস্ত্র। গত ৫ আগস্ট বিকেল তিনটা থেকে চারটার মধ্যে অস্ত্রধারী ওইসব নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আত্মগোপনে গেলেও তাঁদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার হয়নি। অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রুবেলকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের নিকট থেকে অস্ত্রগুলো সম্পর্ক তারা কোনো তথ্য পুলিশকে দেননি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যদিও গত ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের ওপর প্রকাশ্যে দুহাতে গুলি চালাতে দেখা যায় রুবেলকে। তবে রিমান্ডে রুবেল দাবি করেছেন, ওই অস্ত্র দুটি তাঁকে যুবলীগের এক নেতা দিয়েছিলেন। তাকে তিনি ওইদিনই ফেরত দিয়েছেন বলে রিমান্ডে পুলিশকে জানিয়েছে। ওইদিন নিহত শিক্ষার্থী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম অবৈধ অস্ত্রের গুলিতেই নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত অস্ত্রের গুলিতেই নিহত হয়েছেন রায়হান ও সাকিব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে শুরু থেকেই মারমুখি আচরণ ছিল আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এমনকি আনোদলনের সমর্থনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তাদেরকেউ প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভাংচুর করা হয়েছিল বিএনপির মহানগর কার্যালয়ও। আন্দোলন দমাতে ওই সময় প্রকাশে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে গত ৪ ও ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে পিস্তল, সটগান ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকাশে মাঠে নামেন তারা। নগরীর শুরুর দিকে নগরীর সাহেবাজার এলাকার জলিল বিশ্বাস মার্কেটের নিচে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহারা বসাতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে। আন্দোলন দমাতে বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা-কর্মীদের কাঁধে করে বিশেষ ব্যাগে এবং হাতে হাতে ধারালো অস্ত্র, ককটেল বহন করতে দেখা যায়। সর্বশেষ গত ৪ ও ৫ আগস্ট প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে রাস্তায় নেমে পড়েন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যুবলীগ নেতা জহিরুল রুবেল, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত, মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজ নেতা-কর্মী। তারা নগরীর আলুপট্টি এলাকায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস পাহারা দেয়ার পাশাপাশি রাজশাহী নগর ভবনও অস্ত্র হাতে নিয়ে পাহারা বসিয়েছিলেন।

আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর একাধিক সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের দিনই রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওইদিন নগরীর তালাইমারী থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে সাহেববাজারের দিকে আসতে থাকলে আলুপট্টি এলাকায় পিস্তল, ককটেল, সটগান ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন আন্দোলনকারীদের ওপর। ওইসময় দু’হাতে গুলি করতে দেখা যায় রাজশাহীর শীর্ষ সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেলকে। এর বাইরেও অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীর হাতে পিস্তল সটগান ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ওইদিন ঘটনাস্থলেই কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাকিব আঞ্জুম নামের এক শিক্ষার্থীকে। এছাড়াও গুলিতে নিহত হোন আলী রায়হান নামের আরেক শিক্ষার্থী।

ওই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমজান আলীসহ প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠনের হাজার চারেক নেতাকর্মী। তবে প্রথম সারির নেতাকর্মীদের হাতে অস্ত্র দেখা না গেলেও তাদের অনুসারী অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মীর হাতে অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে।

এছাড়া অন্তত ৫শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। এর বাইরে আরও অন্তত ত্রিশজনের পকেটে ছিল পিস্তল। সবমিলিয়ে অন্তত অর্ধশত অবৈধ পিস্তল নামানো হয়েছিল ওইদিন মাঠে। যাদের অধিকাংশই যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্নপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক।

পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওইদিন রায়হান যে গুলিতে নিহত হোন, সেটি ছিল অবৈধ অস্ত্রের গুলি। ছোট আকারের অস্ত্রের গুলিতে নিহত হোন আলী রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম। কাজেই বিষয়টি স্পষ্ট যে পুলিশের গুলিতে রায়হান ও সাকিব আঞ্জুম নিহত হোননি। কিন্তু ওই ঘটনার পরে ২-৩ ঘন্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে গেলেও তাঁদের অস্ত্রগুলো এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। এমনকি রুবেলকে প্রকাশ্যে দুই হাতে গুলি চালাতে দেখা গেলেও সে গ্রেপ্তারের পরেও তার সেই ব্যবহৃত অস্ত্র দুটি উদ্ধার করা যায়নি।

পুলিশের ওই সূত্রটি দাবি করেছে, ৫ আগষ্ট ছাত্রদরে বিজয়ের পর পরই মাত্র দুই-তিন ঘন্টার মধ্যে অস্ত্রধারীরা আত্মগোপনে যান। কিন্তু তারা তো আর অস্ত্র সঙ্গে করে নিয়ে যাননি। নিশ্চয় অস্ত্রগুলো রাজশাহীতেই আছে। তবে এতো দ্রুত তারা আতগোপনে যাওয়ার পরেও অন্ত্রগুলো কিভাবে সরিয়ে ফেললেন সেটি নিয়েও চরম ধোয়াসার মধ্যে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলা যায়, পলাতক নেতাকর্মীদের এতোগুলো অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকটা গোলক-ধাদার মধ্যে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। যদিও অস্ত্রগুলো উদ্ধারে এখনো ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নগরীর বোয়ালিায়া থানা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মহানগর আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু তারা দু’জনের কেউই অস্ত্র সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। রুবেল দুহাতে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করলেও সে অস্ত্র তার ছিল না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে। ওই অস্ত্র দুটি মহানগর যুবলীগের এক তাকে দিয়েছে এবং তার লোকজনকেই সে ফেরত দিয়েছে বলে রিমান্ডে স্বীকারোক্তি দিয়েছে রুবেল। তবে ডাবলু সরকার অস্ত্র নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেননি বলেও সূত্রটি দাবি করেছে। যদিও রুবেলকে একটি ব্যাগে করে অস্ত্র বহন করতে দেখা যায় এবং সংঘর্ষের পরে তার নিজের অস্ত্রসহ ওই ব্যাগটি হারিয়ে গেছে বলেও ওইদিন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেই রুবেলকে বলতেও শোনা গেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র দাবি করেছে। রুবেল নিজেকে বাঁচাতে এখন মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। তবে রুবেল ছাড়াও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর হাতেই সেদিন প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখা গেছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মাদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বেশকিছু অস্ত্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবহার করেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু সেগুলোর হদিশ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন রিমান্ডে তারা অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। যাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে, তারা তো দেশ এবং দেশের বাইরে পলাতক আছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এরা তো সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে যায়নি। অস্ত্রগুলো নিশ্চই রাজশাহীতেই আছে। আমরা সেগুলো উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছি। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগগুলো কাজ করছে। আশা করছি আমরা ভালোকিছু রোজল্ট পাবো।’
স.আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর