সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট প্রদাহজনিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় হাঁচি-কাঁশি মাধ্যমে ছড়াতে পারে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এরপরে রয়েছে ডায়রিয়াজনিত রোগের অবস্থান। তবে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য।
চিকিৎসকরা আরও জানান প্রতি বছর বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার মৃত্যুবরণ করে। প্রত্যন্ত এবং অনুন্নত অঞ্চল যেখানে অপুষ্টি এবং বায়ু দূষণের প্রকোপ বেশি সেখানে নিউমোনিয়া প্রকোপও বেশি দেখা যায়।
তবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) তথ্য মতে, দেশে বছরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে ২৪ হাজার শিশু। ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, দেশে মোট শিশু মৃত্যুর প্রায় ১৮ শতাংশই হয় নিউমোনিয়ার কারণে। এমনকি বিশ্বে নিউমোনিয়ার কারণে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সি ১৪ লাখ শিশু মারা যায়, যা বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মোট মৃত্যুর ১৮ শতাংশ।
ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। ৬৫ বছর বয়সি সিওপিডিতে আক্রান্তদের নিউমোকোক্কাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একজন সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে ৭ দশমিক ৭ গুণ বেশি। যাদের হাঁপানি রয়েছে তাদের ঝুঁকি ৫ দশমিক ৯ গুণ বেশি। ৫০ বছরের বেশি বয়সি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বছরে ১৬ লাখ মানুষের নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর জন্য বায়ু দূষণ এবং ধূমপান দায়ী বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, নিউমোনিয়ার বেশকিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শিশুর অপুষ্টি, পরিমিত পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ না পাওয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা। এছাড়া ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ু ও পরিবেশে বায়ু দূষণ, পরোক্ষ ধূমপান শিকার হওয়া, জনাকীর্ণ জীবনযাত্রা, দুর্বল স্যানিটেশন, সীমিত স্বাস্থ্যসেবা ও ধোঁয়া নিউমোনিয়ার রোগের প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের ১৬টা শয্যা ও ৩টি কেবিন এবং রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আরআইসিউ) ১০টি শয্যা আছে। শয্যাগুলো বছরজুড়েই রোগীতে পূর্ণ থাকে। শিশু হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ ভাগই ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গ্রামাঞ্চল থেকে আসে। শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফুসফুসের ভয়ানক রোগ নিউমোনিয়া। শিশুদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। দুই দশক ধরে বাংলাদেশের মতো মধ্যম ও স্বল্প আয়ের দেশে শিশুমৃত্যুর প্রথম কারণ নিউমোনিয়া। দেশে শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। তবে শিশুর জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা শতকরা ১৫ ভাগ কমে যায়। আর ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগতমান উন্নত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমানো সম্ভব। বাংলাদেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুটি টিকা আছে। তা হলো নিউমোকোক্কাল ভ্যাকসিন (পিসিভি ও পিপিএসভি)। এর বাইরে যেসব শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদেরকে প্রতি বছরই ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায়। একইসঙ্গে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা, বুকের দুধ পান করানোর পাশাপাশি প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। শিশুর জ্বর, সর্দি কিংবার ঠান্ডা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
এদিকে এমন প্রেক্ষাপটে নিউমোনিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০২৪। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘চ্যাম্পিয়নিং দ্য ফাইট টু স্টপ নিউমোনিয়া’ অর্থাৎ আসুন নিউমোনিয়া বন্ধ করার লড়াইয়ে সক্রিয় সহযোগী হই’। দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক পালমোনলিজি ফোরামের উদ্যোগে সচেতনতামূল র্যালি বের করা হবে। সকাল ১০টায় ঢামেকের ডা. মিলন হলে সায়েন্টিফিক সেমিনার, প্যানেল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সব হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও লাং ফাউন্ডেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের নিয়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হবে। সূত্র: যুগান্তর