শনিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১০ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

হাসিনা আমলের প্রভাবশালীরা এখন কে কোথায়?

Paris
অক্টোবর ২৬, ২০২৪ ১:২১ অপরাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি-নেতারা আত্মগোপনে চলে যান; গা-ঢাকা দেন হাসিনা সরকারের পুতুল হিসেবে কাজ করা পুলিশ-প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও। তাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ বুঝে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে হত্যাকাণ্ডের মামলায় কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হচ্ছেন।

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মামলা মাথায় নিয়ে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ অনেক প্রভাবশালী নেতা। ইতোমেধ্যে ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তাারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পরোয়ানা তামিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরসহ প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের হদিস মিলছে না। তারা কোথায় আত্মগোপন করে আছেন? দেশেই আছেন, নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন? এমন অনেক প্রশ্ন এখন জনমনে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে দলটির প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিম, হাছান মাহমুদ এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও হারুন অর রশীদসহ আলোচিত-সমালোচিত প্রভাবশালীরা সুযোগ বুঝে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে সূত্র জাানিয়েছে। অন্যদিকে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা হাসিনার পতনের পর চলে গেছেন লোকচক্ষুর আড়ালে।

রাজনৈতিক ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট-চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি পালিয়ে থাকলেও দেশত্যাগের চেষ্টা করেননি। দলটির প্রেসিডিয়াম সমস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এতদিন দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি অবৈধ পথে ভারতে পালিয়েছেন।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে নানারকম গুঞ্জন রয়েছে। বলা হচ্ছে, গত ৬ আগস্ট যশোর এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় ওবায়দুল কাদের পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। গত ৭ আগস্ট ওবায়দুল কাদের এবং ড. হাছান মাহমুদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়েন বলেও গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে। তবে ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা নিশ্চিত করেছেন, ওবায়দুল কাদের ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাকে ভারতে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেয়নি। তিনি বর্তমানে দেশেই রয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ওবায়দুল কাদের সীমান্তবর্তী একটি জেলায় অবস্থান করছেন। এর আগে ওপেনহার্ট সার্জারি হওয়ার পর নিয়মিত তিনি সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট করাতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আর সেখানে যেতে পারছেন না। যেতে পারছেন না বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালেও। শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি গ্রেপ্তার থেকে ‘ছাড়’ পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

গত ১৫ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের সাম্প্রতিক আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ। আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি। কোটাবিরোধী আন্দোলনের কিছু নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ইউপি চেয়ারম্যান থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়া আ ক ম মোজাম্মেল হক গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে চাউর আছে, তিনি এখনও গাজীপুরেই গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে গিয়ে আটকা পড়েন। প্রশাসনের লোকজন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময় তিনি প্রশাসনের নজরে ছিলেন। মাঝখানে হঠাৎ তার গ্রেপ্তার হওয়ার গুঞ্জন দিনভর চলতে থাকে। যদিও তিনি নিজেই গোপন জায়গা থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসএমএস বিনিময় করে জানিয়ে দেন তিনি নিরাপদেই আছেন। দলের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আরাফাত আমেরিকায় আছেন। তাকে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতেও দেখা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতনের পর অন্তত ১৮৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা লাপাত্তা। অনুপস্থিতির কারণে বরখাস্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ ও বিপ্লব কুমার সরকার কয়েক ডজন মামলার আসামি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের প্রভাবশালী এই চার কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে কে কোথায় আছেন সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। মনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও বিপ্লব কুমার সরকারের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। মনিরুল ইসলামের দিল্লির একটি সুপারশপে কেনাকাটার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি দেশেই আছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের বাসায় যাচ্ছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই প্রাণ রক্ষার্থে ঢাকাসহ বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি। সেদিন দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়ার সরকারি বাসভবন থেকেও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আত্মগোপনে চলে যান।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর দুটি হেলিকপ্টার এসে নামে পুলিশ সদর দপ্তরের ছাদ থেকে পুলিশের তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা ও সরকারের সুবিধাভোগীদের অবস্থান ও অন্তর্ধানের বিষয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন শুরু হলে গত ১৮ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার পতনের পর প্রাণরক্ষার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিচারক, পুলিশ সদস্যসহ ৬২৬ জন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এদিকে গ্রেপ্তার, আত্মগোপন কিংবা পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ-দুর্নীতির সহযোগী প্রভাবশালীদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা অন্তরালে চলে গেছেন। তবে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুবিধাভোগীদের মামা, চাচা, ফুফু ও খালাসহ স্বজনরাও ফাঁসছেন। এ আত্মীয়-স্বজনও মামলার আসামি হচ্ছেন। তাদের তলব করা হচ্ছে দুদকে, জব্দ করা হচ্ছে ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, তার স্ত্রী, শ্বশুরসহ ১২ জনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়