মঙ্গলবার , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

লেবাননে হেজবুল্লাহ কারা এবং তারা কি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে?

Paris
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪ ৭:০৭ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

বুধবার লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ২৫ জন নিহত এবং অন্তত ৬০০ জন আহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এর আগের দিন একটি সিরিজ পেজার বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবারের বিস্ফোরণগুলো ঘটেছে।

হেজবুল্লাহ এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াই গত ১১ মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে তীব্র হয়েছে।

ইসরায়েল অবশ্য এই বিস্ফোরণের বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট “যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব” ঘোষণা করেছেন।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা দক্ষিণ লেবাননে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে নতুন হামলা চালাচ্ছে।

হেজবুল্লাহ কী, কোথায় কাজ করে?
হেজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি শিয়া মুসলিম সংগঠন, যেটি লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এটিকে ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের বিরোধিতা করার জন্য এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া শক্তি ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তখন দেশটির গৃহযুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবানন দখল করেছিল।

হেজবুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সংগঠনটির উপস্থিতি দেখা যায়।

এর সশস্ত্র শাখা লেবাননে ইসরায়েলি ও মার্কিন বাহিনীর উপর মারাত্মক হামলা চালিয়েছিল। লেবানন থেকে ২০০০ সালে ইসরায়েল যখন সৈন্যদের প্রত্যাহার করে, হেজবুল্লাহ তখন সেই সৈন্য প্রত্যাহারের কৃতিত্ব নেয়।

এরপর থেকে, হেজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার যোদ্ধা এবং বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, পাশাপাশি বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে চলেছে।

গোষ্ঠীটিকে পশ্চিমা রাষ্ট্র, ইসরায়েল, উপসাগরীয় আরব দেশগুলি ও আরব লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকে।

হেজবুল্লাহর একটি মারাত্মক আন্তঃসীমান্ত অভিযানের ফলে হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে ২০০৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়।

ইসরায়েলি বাহিনী হেজবুল্লাহর হুমকি মোকাবেলায় দক্ষিণ লেবাননে আক্রমণ করলেও গোষ্ঠীটি টিকে যায় এবং এরপর থেকে তাদের যোদ্ধা সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ নতুন ও উন্নত অস্ত্রের ভান্ডারও গড়ে তোলে।

হেজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ কে?
শেখ হাসান নাসরাল্লাহ একজন শিয়া ধর্মগুরু যিনি ১৯৯২ সাল থেকে হেজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এটিকে একটি রাজনৈতিক, সেইসাথে একটি সামরিক বাহিনীতেও পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন হাসান নাসরুল্লাহ।

ইরান এবং তার সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তার।

ইসরায়েল তাকে হত্যা করতে পারে, এই ভয়ে নাসরাল্লাহ কয়েক বছর ধরেই আর জনসমক্ষে আসেন নি।

তবে তিনি হেজবুল্লাহর কাছে খুবই শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব এবং প্রতি সপ্তাহেই টেলিভিশনে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।

হেজবুল্লাহর বাহিনী কতটা শক্তিশালী?
হেজবুল্লাহ বিশ্বের সবচেয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অরাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর একটি, যেটিকে অর্থায়ন করেছে ইরান।

হাসান নাসরাল্লাহর দাবি, সংগঠনটির এক লক্ষ যোদ্ধা রয়েছে, যদিও অনুমান করা হয়, সংখ্যাটি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

এদের অনেকেই বেশ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ যোদ্ধা, এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও লড়াই করেছে তারা।

সেন্টার ফর র্স্ট্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, হেজবুল্লাহর আনুমানিক ১২০,০০০-২০০,০০০ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

তাদের অস্ত্রাগারের বেশিরভাগই ছোট, অনির্দেশিত, আর্টিলারি রকেট।

তবে হেজবুল্লাহর বিমান বিধ্বংসী ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ইসরায়েলের গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলেও মনে করা হয়।

গাজায় হামাসের তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে হেজবুল্লাহর কাছে।

হেজবুল্লাহ কি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে?
অতীতের বিক্ষিপ্ত লড়াই ২০২৩ সালের আটই অক্টোবর তীব্র হয়ে ওঠে গাজা থেকে ইসরায়েলে হামাসের অভূতপূর্ব আক্রমণের পরের দিন – যখন হেজবুল্লাহ ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলি অবস্থানে গুলি চালায়।

এরপর গোষ্ঠীটি উত্তর ইসরায়েল ও গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি অবস্থানগুলি লক্ষ্য করে আট হাজারেরও বেশি রকেট উৎক্ষেপণ করে, সাঁজোয়া যানগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালায়।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) লেবাননে হেজবুল্লাহ অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা এবং ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশোধ নেয়।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ৫৮৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই হেজবুল্লাহ যোদ্ধা ছিল, তবে এদের মধ্যে অন্তত ১৩৭ জন বেসামরিক নাগরিকও ছিল বলে জানায় মন্ত্রণালয়টি।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ২১ জন সেনা নিহত হয়েছে।

এতে সীমান্তের উভয় পাশে প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

যুদ্ধ সত্ত্বেও, পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষই পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে যাওয়ার সীমা অতিক্রম না করে শত্রুতা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে গত ২৭শে জুলাই রকেট হামলায় ১২টি শিশু নিহত হওয়ার পর সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। ইসরায়েল এই হামলার জন্য হেজবুল্লাহকে দায়ী করলেও গোষ্ঠীটি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

আইডিএফ ৩০শে জুলাই ঘোষণা করে যে তারা বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলীতে একটি বিমান হামলা চালিয়ে হেজবুল্লাহর সিনিয়র সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরকে হত্যা করেছে।

পরদিন ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহ নিহত হন। ইসরায়েল এতে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি।

তখন থেকেই, হেজবুল্লাহ ও ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা দেখা যাচ্ছে, যারা উভয়েই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে উত্তেজনা কমানোর আশা করছে এবং সেই লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের উপর চাপ দিচ্ছে। তবে হেজবুল্লাহ বলেছে যে গাজায় যুদ্ধ শেষ হলেই কেবল তারা এই শত্রুতার অবসান ঘটাবে।

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক