সিংড়া প্রতিনিধি :
গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে বিদেশী কোম্পানিতে চাকুরির লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। ছেলে কে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে বাবার শেষ সম্বল একখন্ড জমি বিক্রি ও গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুদে (দাদন) নেওয়া টাকা প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দিয়ে নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক পরিবার। স্বপ্ন দেখার শুরুতেই প্রতারিত হয়ে সেই স্বপ্ন যেন বিষাদে পরিণত হচ্ছে। এমনই ঘটনা ঘটেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের জয়নগর-কেশবপুর ও হরিপুর গ্রামের চার হত দরিদ্র পরিবারের সাথে। প্রতারক চক্র চার পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কুড়ি লক্ষাধিক টাকা।
এর মধ্যে কেশবপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান দুই পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভূক্তভোগী দুইজন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিদেশী কোম্পানিতে চাকুরির প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন ফুরফুরে মেজাজে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতারক আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান।
এছাড়াও সিংড়া পৌর শহরের দমদমা এলাকার বজলুর রহমান ওরফে বকুল নামের এক প্রতারকের বাড়িতে কোরিয়ান ভাষা শিখতে এসে নাজিরপুরের নুরনবী মিয়া সহ পাঁচ ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। কোরিয়ান ভাষা শেখানোর আড়ালে তুরস্কে পাঠানোর নামে এই চক্রটি নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়নগর গ্রামের দিন মজুর মিনহাজ উদ্দিন ও রসুল আলীর বাড়িতে গিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করা দুটি পরিবারের সদস্যদের বিদেশে চাকুরির স্বপ্ন দেখান প্রতিবেশী বিদেশ ফেরত আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান। মূহুর্তেই দুই পরিবারের শেষ সম্বল একখন্ড জমি বন্ধকীর টাকা ও গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে সুদে (দাদন) নেয়া সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বিদেশ ফেরত আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান। দিন মজুর মিনহাজ উদ্দিন ও রসুল আলীকে মালেশিয়ার নিপা প্লানটেশন কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা থাকলেও গত ১৯ আগস্ট প্রতারণার মাধ্যমে তাদেরকে ভিয়েতনামে ট্যুরিষ্ট ভিসায় পাঠানো হয়। সেখানে দালাল ও প্রতারক চক্রের হাতে নানা ভাবে নাজেহাল হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা ২ সেপ্টেম্বর রাতে জীবন বাঁচিয়ে দেশে ফিরেন। এদিকে একই ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মো. শিমুল ও মেহেদী নামের আরো দুই যুবক কে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালেশিয়ার পরিবর্তে ভিয়েতনামে ট্যুরিষ্ট ভিসায় পাঠায় অপর আরেকটি চক্র। শেষ পর্যন্ত তারা কয়েকদিন না খেয়ে থেকে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করে বাড়ি ফিরেছেন। প্রতারক চক্রের ভয়ে তারা অভিযোগ করতেও পারছেন না।
ভুক্তভোগী জয়নগর গ্রামের মিনহাজ উদ্দিন ও রসুল আলী বলেন, তারা গ্রামের সহজ সরল লোক। তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান সর্বশান্ত করেছে। প্রতারণা করে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালেশিয়ার নামি দামি কোম্পানিতে কাজ দেয়ার পরিবর্তে ভিয়েতনামে ট্যুরিষ্ট ভিসার পাঠিয়ে দেয়। পরে সেই দেশের দালালদের খপ্পরে পরে খেয়ে, না খেয়ে অতিকষ্টে ১২ দিন পর জীবন বাঁচিয়ে দেশে ফিরেছেন। এখন একদিকে সুদে ঋণের চাপ ও অপরদিকে সংসার চালানো নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছেন।
প্রতিবেশী আব্দুল মমিন, জিল্লুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম সহ অন্তত সাতজন ব্যক্তি বলেন, হঠাৎ বিদেশ থেকে ফিরে আব্দুল হান্নান এলাকায় প্রতরণার ফাঁদ পেতে বসেছে। ইতিমধ্যে দুটি পরিবারের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে নিজেকে বাঁচাতে নাটক সাজানোর চেষ্টা করছে প্রতারক আব্দুল হান্নান। তার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী দিনমজুর রসুল আলীর স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, সুখে খেকে এসে এখন তার সবকিছু ভুতে খেয়ে গেছে। প্রতারক চক্রের মুলহোতা আব্দুল হান্নানের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে সব হারিয়ে তার পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। প্রতারক আব্দুল হান্নানের পা ধরে কান্নাকাটি করেও দুটি পরিবারের লোকজন নিস্তার পাইনি। এমন ঘটনা যেন আর কোন পরিবারে না ঘটে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এবিষয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা আব্দুল হান্নান ওরফে মেহেদী হাসান বলেন, আমি তাদেরকে শতভাগ নিশ্চিত ভিসা দিয়ে পাঠিয়েছি। যদিও প্রথমে তাদেরকে মালেশিয়া পাঠানোর কথা থাকলেও কিছু সমস্যার কারণে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা আমার সাথে যোগাযোগ না করেই সেই দেশ থেকে চলে এসেছে বলে নিজের পক্ষে সাফাই গান।
সিংড়া থানার উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) আকবর আলী বলেন, এই ধরণের প্রতারকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।