বৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

প্রশিক্ষক নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়ম স্বজনপ্রীতি মোহনপুর টিটিসিতে

Paris
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর মোহনপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) প্রশিক্ষকসহ কয়েকটি পদের নিয়োগে ভয়াবহ অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। মোট ১৫টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও চাকরি দেওয়া হয়েছে ১৮ জনকে। নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যক্ষের চাচাতো ভাই, ভাগ্নেসহ সহকর্মীদের ঘনিষ্ঠজনেরা। গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে দ্রুতই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। অধ্যক্ষ আতাউর রহমান আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অবসরে যাচ্ছেন। এখন তাঁর অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগে স্বজনপ্রীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক ও কর্মচারীরা। আগে বদলিসহ নানারকম শাস্তির ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারিগারি শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যাসেট প্রকল্পে লিড ট্রেনার, সহকারী ট্রেনার, হিসাবরক্ষক ও ওয়ার্কশপ অ্যাটেনডেন্টের ১৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে লিড ট্রেনার ও সহকারী ট্রেনার পদ দুটির বিপরীতে ‘অতিথি প্রশিক্ষক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনরকম লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে গত ৫ মে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে আরও তিনটি অতিরিক্ত পদে নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ। এরমধ্যে অতিথি প্রশিক্ষক পদে ১০ জন, ল্যাব সহকারী পদে ৫ জন এবং হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর ও স্টোর কিপার পদের প্রতিটিতে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে অতিথি প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ পান অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের ভাগ্নে আবু সুফিয়ান মো. মোস্তাফিজ-উল হক। একই ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া রেজওয়ানুল হক আবির রংপুর টিটিসির অধ্যক্ষের ছেলে। গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া প্রশিক্ষক আসিফ আহমেদ সৈকত অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের বন্ধুর ভাতিজা।

মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া শামীম হোসেন অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের আপন চাচাতো ভাই। শামীম হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাহিত শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তারপরেও তাকে নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যক্ষ। তার প্রশিক্ষণ প্রদানের অদক্ষতার কারণে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণার্থীরা তার ক্লাস বর্জন করেন। গত ৭ জুলাই প্রকল্পের শর্ট কোর্সের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী বি এম শরীফুল ইসলাম মোহনপুর টিটিসি পরিদর্শনে গিয়ে শামিম হোসেনকে প্রশ্ন করেন, প্রথম সাইকেলের কোন লেভেল শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে? শামিম উত্তর দিতে না পারার কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত খণ্ডকালীন ইন্সট্রাক্টর আপেল মাহমুদ ও অধ্যক্ষ আতাউর রহমান একসময় শরীয়তপুর টিটিসিতে কর্মরত ছিলেন। আপেল মাহমুদের সুপারিশে আসমানি খাতুন ও ইমাম হোসেন নামের দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশিক্ষক হিসেবে। এই দুইজনেরই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাহিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সিভিল কন্সট্রাকশন ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া ননী গোপাল বিশ্বাস রাজশাহী টিটিসিতে আতাউর রহমানের সহকর্মী ছিলেন। রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ ইমদাদুল হকের ভাগ্নে মাহাবুর রহমানকেও ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন আতাউর রহমান।

তিনি এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের সুপারিশে সাইফুদ্দিন শেখ নামের আরেকজনকে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেন। এছাড়া রাজশাহী টিটিসির অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক নিজাম উদ্দিনকে মোহনপুর টিটিসিতে একই পদে, আব্দুল জলিল নামের একজনকে স্টোর কিপার এবং সুসম্পর্কের খাতিরে এক নারীকে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ।

প্রভাবশালীদের সুপারিশেই প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সূত্র বলছে, অ্যাসেট প্রকল্পের প্রথম ব্যাচে (চলতি বছরের মে থেকে জুলাই) ও দ্বিতীয় ব্যাচে (চলতি বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর) শর্ট কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী ভর্তিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুলের সুপারিশে ১০ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি নেন অধ্যক্ষ। মেধার অবমূল্যায়ন করে তিনি সুপারিশেই প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি নিতেন বেশি। এভাবে প্রভাবশালীদের সন্তোষ্ট রেখে অনিয়ম করতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিটিসিতে অধ্যক্ষ আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মও রয়েছে। কাঁচামাল ক্রয়ের বরাদ্দের অর্থ লোপাট হয় এই টিটিসিতে। এখানে হিসাবরক্ষক নিজাম উদ্দিন থাকলেও অধ্যক্ষ তার ভাগ্নে অতিথি প্রশিক্ষক আবু সুফিয়ান মো. মোস্তাফিজ-উল হককে দিয়ে সার্বক্ষণিক হিসাব শাখা নিয়ন্ত্রণ করেন। বরাদ্দ ও ব্যয়ের কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। অধ্যক্ষের জন্য মোহনপুরে আবাসিক কোয়ার্টার থাকলেও তিনি থাকতেন না। ৩৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী নগরের শিরোইল মঠপুকুর এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তিনি যাতায়াত করতেন। এ জন্য ব্যবহার করতেন ভাড়ায় চালিত প্রশিক্ষণ গাড়ি। প্রতি কার্যদিবসে এই গাড়িটির এক হাজার টাকার করে এলপিজি গ্যাসের বিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ আতাউর রহমান। কোয়ার্টারে না থেকে প্রশিক্ষণ গাড়িতে বাড়ি থেকে যাতায়াত করার প্রসঙ্গটি তিনি এড়িয়ে যান। অধ্যক্ষ স্বীকার করেন, প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শামিম হোসেন তার চাচাতো ভাই। তবে নিয়োগ পাওয়া অন্য কারও সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন। অধ্যক্ষের দাবি, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ১৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়েছে।

স.আর

সর্বশেষ - অপরাধ ও দুর্নীতি