বৃহস্পতিবার , ১ আগস্ট ২০২৪ | ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

টেক্সটাইল খাতের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

Paris
আগস্ট ১, ২০২৪ ১২:১৯ অপরাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের টেক্সটাইল বা বস্ত্র খাত। গেল ১৫ দিনে এ খাতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। টেক্সটাইল মিল চালু হলেও উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। একদিকে ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী আগের পণ্য এখনো পৌঁছানো যায়নি। অন্যদিকে নতুন অর্ডার নিয়েও রয়েছে সংশয়। এই ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পণ্য উৎপাদন কিংবা বিক্রি না হলেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যাংক ঋণের বোঝা। এই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে কিনা এ নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা।

টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, মহামারী করোনার ধাক্কার রেশ এখনো কাটেনি। করোনার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে বাংলাদেশ। আক্রান্ত হয় টেক্সটাইল শিল্প। অনেক উদ্যোক্তা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে আছেন। এর মধ্যে চলমান কোটা আন্দোলনে সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ টেক্সটাইল শিল্পকে আবার হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এতে ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। এর ফলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল, স্থগিত এমনকি বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তারা এ দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

জানা গেছে, কোটা আন্দোলন সহিংস রূপ পাওয়ার পর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। গত ১৮ জুলাই সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিলে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন রাতে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট। ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি হলে সারাদেশে সেনা নামানো হয়। বন্ধ হয়ে যায় কল-কারখানা ও বন্দরে পণ্য পাঠানো। আর তার আগে বন্দরে যেসব রপ্তানি পণ্য পৌঁছেছিল, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সেগুলোর শিপমেন্টও আটকে যায়।

অন্যদিকে শিল্পের জন্য আমদানি করা কাঁচামালও বন্দরে আটকে যায়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের সঙ্গে উদ্যোক্তারা কিংবা ক্রেতারাও যোগাযোগ করতে পারেনি। আমদানি-রপ্তানি বন্ধের কারণে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছানো যায়নি। এদিকে নতুন অর্ডারও পাওয়া যায়নি। বস্ত্র কারখানাগুলো রপ্তানিতে অবদান রাখার পাশাপাশি

স্থানীয় বাজারেই বছরে জোগান দেয় দেড় লাখ কোটি টাকার কাপড়। কিন্তু এই অস্থিরতার কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই বিপাকে পড়তে হয়েছে। এর মধ্যে অনেক টেক্সটাইল মিল চালু করা যাচ্ছে না গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে।

আন্দোলনের কবলে পড়ে বন্ধ হয় নরসিংদী অঞ্চলের মোমিন টেক্সটাইল। বর্তমানে কারখানা খুললেও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে সক্ষমতার ৪০ শতাংশও উৎপাদন করতে পারছে না মিলটি।

এ প্রসঙ্গে মোমিন টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান মোমিন মিয়া বলেন, বর্তমানে উৎপাদন নেই বললেই চলে। একে তো আন্দোলনের কবলে পড়ে মিল বন্ধ ছিল। এখন আবার বিদ্যুৎ নেই। মিল চালু করা যাচ্ছে না। চলমান অস্থিরতার কারণে দেশীয় ক্রেতারা আতঙ্কে মার্কেটে আসেন না। অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারাও ভয়ে আছে কখন আবার বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অর্ডারও পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হিসাব মতে, বর্তমানে সারাদেশের কারখানাগুলো গড়ে সক্ষমতার ৫০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারছে। বিভিন্ন অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বড় বস্ত্রকলগুলোর বাইরেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি ও ছোট বস্ত্রকল রয়েছে। চলমান অস্থিরতায় সেগুলোও বন্ধ ছিল। অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এই শিল্পের ওপর।

এদিকে ব্যাংক থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) টাকা নিয়েও বিপাকে আছেন উদ্যোক্তারা। সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় অনেকে নির্ধারিত সময়ে ইডিএফের অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। এদিকে এ সময়ে অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে পরবর্তীতে এই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন উদ্যোক্তারা।

জানতে চাইলে বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, চলমান অস্থিরতায় টেক্সটাইল শিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্প যে লোকসান করেছে তার ৭০ শতাংশ টেক্সাইল খাতের। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই ক্ষতির মুখে পড়েছে এ শিল্প। এ শিল্পে ১০ লাখের বেশি লোক কাজ করেন।

খোকন আরও বলেন, কারফিউর মধ্যে মিলগুলো চালু হলেও উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। আর উৎপাদন করেও লাভ নাই। কারণ সেগুলো বিক্রি করা যাবে না। স্টকলট হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই অর্ডার নেই। এর মধ্যে আবার গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা। মিল বন্ধসহ উৎপাদন কম হওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে। ক্রমাগত লোকসান দেবে কারখানাগুলো। চলমান সংকট আরও দীর্ঘ হলে রপ্তানি কমবে, অনেকে চাকরি হারাবেন।

 

 

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য