সোমবার , ২৯ জুলাই ২০২৪ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পবায় দুই ভায়ের সন্ত্রাসী তান্ডবে আতঙ্কিত এলাকাবাসী

Paris
জুলাই ২৯, ২০২৪ ১১:০৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
“বাবা, এভাবে টিপ দিল আর এত বড় লম্বা ছুড়ি বের হয়ে আসলো ! সেই ছুড়ি আমার গলায় ধরলো। ধরে বললো, তোরা বাড়ি ছাড়বি নাকি তোদের গলা কাটবো? এই রেফা বাংলা সিনেমার মত গোন্ডা-পান্ডা নিয়ে এসে আমার ঘর ভাঙলো, আমার ছেলেদের মারলো। বাড়ির সামনে আগুন ধরিয়ে দিলো।

আমরা যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারি সেজন্য বাড়ির সামনে বালু দিয়ে আমাদের একমাস ঘর বন্দি করে রাখলো। পরে ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিত স্যার এসে আমাদের উদ্ধার করেছে বাবা, তা না হলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতো।”

এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার পিল্পাপাড়া গ্রামের ৬২ বছর বয়সী স্বামীহারা বৃদ্ধা জয়গন বেগম। তিনি বলেন, “আমার স্বামী এই জমি কিনে, জমির কাগজ থাকা সত্বেও রেফা গোন্ডা বাহিনী নিয়ে জোর করে এগুলো জমি দখল করতে চায়। আমরা যাতে থাকতে না পারি সেজন্য আমাদের বাড়ি ভেঙেছে। আমরা খুব অসহায় বাবা। আমাদের অসহায় পেয়ে আমার স্বামীর কিনা জমি জোর করে দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে রেফা। আমরা এদের কাছে থেকে মুক্তি চাই।”

পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের পিল্লাপাড়া গ্রামের নূর ইসলামের দুই ছেলের সন্ত্রাসী তান্ডবে এভাবেই আতন্তিক এলাকাবাসী। এক ভাই রেফাজুল ইসলাম আরেক ভাই আকতারুল ইসলাম আতা। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় রেফাজুল ইসলাম ওরফে রেফা ও তার ভাই আকতারুল ইসলাম আতা তাদের প্রভাব খাঁটিয়ে এলাকায় এভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিচয় বহন করে বিভিন্ন জায়গায় আধিপত্য বিস্তার করে। সে নিজেকে পরিচয় দেয় ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা । কিন্ত বাস্তবে তার কোন পদ-পদবীই নেই। এই বিষয়ে জানতে চাইলে নওহাটা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, “আমরা অনেকদিন আগে থেকেই শুনে আসছি সে (রেফা) এলাকায় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। আসলে রেফা আওয়ামী লীগের কেউ না। সুযোগ-সন্ধানী লোক আওয়ামী লীগে দরকার নেই।”

রেফার আরেক ভাই আকতারুল ইসলাম (আতা) । সে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক । এলাকার তরুণ যুবকদের সাথে মিশে তাদের দিয়ে বিভিন্ন সময়ে এলাকায় অরাজকতা সৃষ্ঠি করে। এর আগে ২০১৫ সালে আকতারুল ইসলাম আতার নেতৃত্বে পাশের গ্রাম (শ্রীপুর) এক অসহায় মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তার পর থেকেই আতা-রেফা দুই ভাইয়ের আতঙ্কে থাকে এলাকাবাসী। এই বিষয়ে পিল্লাপাড়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, তারা (রেফা-আতা) দুই ভাই গ্রামের উঠতি বয়সী তরুণদের টার্গেট করে তাদের সাথে সঙ্গ দেয়। গ্রামের অধিকাংশ তরুণ ছেলে যখন তাদের নেতৃত্বে থাকে তারা যখন সেটিকে পুঁজি করে এলাকায় অরাজকতা করে।

বড়গাছি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রিতা বেগম বলেন, আমার বাড়ির পাশে জমি নিয়ে বিরোধ হয়। সেই বিরোধে রেফা গোন্ডা নিয়ে গিয়ে আমাদের উপরে হামলা করে। আমাকে মারধর করার ফলে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়। রেফা সবজায়গায় আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বেড়ায়। আমরা আওয়ামী লীগের নিবেদীত কর্মী হলেও হাইব্রিড পরিচয়ের আওয়ামী লীগদের কাছে মার খাচ্ছি। এটা কত কষ্টের কথা। আমি এখন পর্যন্ত এ ঘটনার সুষ্ট বিচার পাইনি।
পিল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সবুজ ইসলাম এই বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, “আমি গত রবিার (২৮ জুলাই) বিকেলে পিল্লাপাড়া ভোকেশনাল স্কুল মাঠে দেখি আকতারুল ইসলাম আতা খেলাকে কেন্দ্র করে আমার ছোট ভাইকে বেধর পিটাচ্ছে। আমি কাছে গিয়ে তাকে (আতাকে) জিঙ্গেস করি, আপনি আমার ভাইকে মারছেন কেন কি দোষ তার? এই কথা বলাতেই আতা আমাকেও আচমকা মারতে শুরু করে।

এমতাবস্থায় আমি প্রতিবাদ করলে আতার ছোট ভাই রেফাজুল ইসলাম রেফা সেও এসে আমাকে এবং আমার বাবাকে মারতে শুরু করে। আমি উপায় না দেখে পবা থানা অফিসার ইনচার্জ সোহরাওয়ার্দী ভাইকে ফোন করি। তিনি থানা থেকে র্ফোস পাঠালে আমাদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়। এখন দেখেন ছোট্ট একটি বিষয়ে তারা দুইভাই কিভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে এলাকায়। আমি একজন সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা দুই ভাই কিভাবে সন্ত্রাসীদের মত আমার পরিবারের লোকজনদের উপরে হামলা করে। তাহলে সাধারণ জনগণের উপরে তারা কিভাবে জুলুম করে একটু ভেবে দেখুন। আমি এবং আমার পরিবারের লোকদের নিরাপত্তার জন্য পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। দুই ভাইয়ের ত্রাসের রাজত্ব থেকে আমি সহ এলাকাবাসী মুক্তি চাই।”

আতা ও রেফার বিষয়ে জানতে চাইলে নওহাটা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুল হক বলেন, “তাদের দুই ভাইয়ের ভিতরে আতা ছাত্রদলের নেতা, আরেক ভাই রেফা সব জায়গায় আওয়ামী লীগের পরিচয় দেয়। তাদের বড় ভাই আবার জামায়াত ইসলামের নেতা। রেফা যে কবে থেকে আওয়ামী লীগের নেতা হলো সেটি আমাদের কারোরই জানা নাই। এরা গ্রামের তরুণ সমাজের ব্রেন ওয়াশ করে নিজেদের আয়ত্বে রাখে। এলাকায় এগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। জামায়াত-বিএনপি পরিবার থেকে এসে আওয়ামী লীগের পরিচয় দেয় বিষয়টি বড়ই দুঃখজনক।”

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর