নিজস্ব প্রতিবেদক:
কখনো ব্যবসায়ীদের ধরে এনে চাঁদা দাবিবাজি করে, কখনো মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনো নিজ বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন তিনি। এবার সেই তিনি বিদায় বেলায় প্রায় কোটি টাকার অনিয়ম করে চলে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তিনি হলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. শামসুদ্দিন।
নানা ব্যর্থতা ও অনিয়মের দায়ে সম্প্রতি তাকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার থেকে বদলি করে রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি করা হয়।
বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তা যাওয়ার সময় রেশনের নিম্নমাণের ডাল, রাজশাহী পুলিশ হাসপাতালে নিম্নমাণের ওষুধ সরবরাহ করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আদায় করেন। আর বছর না ঘুরতেই তড়িঘড়ি করে আরএমপির জন্য বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও গাড়ী মেরামতের টেন্ডার করে আদায় করেন আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
সবমিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার অনিয়ম করে চলে যান তিনি। আর তার যাওয়ার পর থেকেই রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে মো. শামসুদ্দিনের নানা অপকর্ম নিয়ে গুঞ্জন।
তার ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত একজন এসআই মহিউদ্দিনকে এরই মধ্যে বদলি করে একটি ফাঁড়িতে দেওয়া হয়েছে। আরেক ক্যাশিয়ার ডিবির এসআই রেজাউল ইসলামকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে।
এ সবই হয়েছে বর্তমান কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম আসার পরে। এ নিয়ে অনেকটা স্বস্তিও ফিরে এসেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মাঝে। তাদের দাবি গত প্রায় দুই বছর ধরে সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজশাহী নগরীতে যেসব অপকর্ম করে গেছেন এবং তাঁর আশে-পাশে থেকে আরো যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য নানা অপকর্ম করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আর সেটি না হলে এখানকার পুলিশের মধ্যকার হারিয়ে ফেলা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।
একাধিক সূত্র সিল্কসিটিনিউজকে জানায়, গত ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে।
এরপর গত ২ মে তড়িঘড়ি করে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য আরএমপি বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও গাড়ী মেরামত, হাসপাতালের ধোলাই, সেলাইসহ বিভিন্ন কাজের ১০ টি গ্রুপে টেন্ডার আহবান করা হয়।
অন্তত ৫০ লাখ টাকা নিয়ে এই টেন্ডার প্রক্রিয়াটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে সম্পন্ন করেন তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন থানার ওসি, এসআই থেকে শুরু করে কনস্টেবলদের ব্যাপক বদলি করতে থাকেন এ সময়ে এর মাধ্য আরো অন্তত ২০ লাখ টাকা আদায় করেন তিনি।
আরএমপি সূত্র আরো জানায়, মো. শামসুদ্দিন সর্বশেষ বড় বাণিজ্য করেন তিনি চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ ও দুদিন আগে। তিনি এখান থেকে বিদায় নেন গত ১৬ জুন। তারে দুদিন আগে গত ১৪ জুন তিনি রেশনের ৪৫ মেট্রিক টন (৪৫ হাজার কেজি) ডাল কিনেন। কিন্তু নিম্নমাণের ওই ডালের বিষয়টি পুলিশ সদস্যরা নিতে না চাইলে বর্তমান কমিশনার শফিকুল ইসলাম এখানে যোগদান করেই সেগুলো ঠিকাদারকে ফেরত নিতে বলেন। এরপর সেই ডাল ফেরত দিয়ে নতুন করে ভাল মানের ডাল কেনা হয় আরএমপি পুলিশ সদস্যদের জন্য।
রাজশাহী পুলিশ লাইন হাসপাতালের একটি সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে নিশ্চিত করেছে, সাবেক কমিশনার শামসুদ্দিন এখান থেকে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওষুধ বুঝিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোও ছিল অখ্যাত কম্পানীর ওষুধ। এই ওষুধের বিষয়টিও ধরা পড়ার পরে বর্তমান কমিশনার এসে সেগুলো ফেরত দিয়ে নতুন করে নামি-দামি কম্পানীর ওষুধ নেন।
আরএমপি সূত্র মতে, সাবেক কমিশনারের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত ছিলেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই মহিউদ্দিন। তিনি সব সময় প্রাইভেট কারে চড়ে নগরীতে ঘুরতেন। তার সঙ্গে একদল পুলিশ সদস্যও রাখতেন। এই এসআই বদলি বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে দিতেন সাবেক কমিশনার শামসুদ্দিনকে।
তবে বর্তমান কমিশনার আসার পরই তাকে বোয়ালিয়া থেকে সরিয়ে মতিহার ফাঁড়িতে বদলি করা হয়। এছাড়াও আরেক ক্যাশিয়ার ডিবির এসআই রেজাউলকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে রাখা হয়েছে হয়। সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেনকে। এছাড়া রেশন স্টোরের ওসি এনামুলের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়ে মহানগর পুলিশের একাধিক সূত্র।
এসব বিষয়ে জানতে সাবেক কমিশনার মো. শামসুদ্দিনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কয়েক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বর্তমান কমিশনার মো: শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে রাজশাহী জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনু মোস্তফাসহ তিন সাংবাদিকের নামে নাশকতার মামলা, ব্যবসায়ীদের ধরে এনে গ্রেপ্তার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য নিয়ে এর আগে ব্যাপক অভিযোগ উঠে।
স/আর