স্পেনের নাইটক্লাবে এক তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ। একইসঙ্গে তাকে ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড় লাখ ইউরো প্রদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাজা আরও বাড়তে পারত সাবেক এই বার্সেলোনা তারকার। এর আগে স্পেনের রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটররা ৯ বছর আর ভুক্তভোগীর আইনজীবীরা আলভেজকে ১২ বছরের দণ্ড দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল।
তবে রায়ে সেই শাস্তি তুলনামূলক কমিয়ে দিয়েছেন কাতালোনিয়ার আদালত। যার পেছনে ভূমিকা রেখেছে ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমার জুনিয়রের দেওয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ও গ্লোবো এই তথ্য জানিয়েছে। নেইমারের পরিবার গত বছরের ৯ আগস্ট আলভেজের ক্ষতিপূরণের টাকা আদালতে জমা দিয়েছিল। কারণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত থাকায় আদালতের নির্দেশমতো অভিযোগকারী তরুণীকে ক্ষতিপূরণের টাকাও দিতে পারছিলেন না আলভেজ।
এর আগে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ক্ষতিপূরণ দিতে না পারলে কড়া সাজা হবে আলভেজের। এমন অবস্থায় নেইমারের পাঠানো টাকা তার জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে আলভেজের চার থেকে ১৫ বছরের জেল হতে পারে বলে তখন খবর বেরিয়েছিল। নেইমার ছাড়া অন্য কেউ এগিয়ে না আসায় কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন এই তারকা ডিফেন্ডার। যা নিয়ে রায় ঘোষণার পর আলভেজের অন্য বন্ধু কিংবা স্বজনদের ওপর ক্ষোভ জানিয়েছেন নেইমারের বাবা নেইমার দ্য সান্তোস সিনিয়র।
ও গ্লোবোর প্রতিবেদন বলছে, নেইমারের বাবা আলভেজের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরই তার প্রতি আস্থা রয়েছে বলে জানান। একইসঙ্গে তার অন্য স্বজনরা তার পাশে না দাঁড়ানোয় ক্ষোভও প্রকাশ করেন নেইমার সিনিয়র, ‘তার (আলভেজ) পরিবার আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। ওই সময় ড্যানিয়েলের (দানি) নিজের খরচ চালানোরও টাকা ছিল না এবং ক্ষতিপূরণ জমা দেওয়ারও সময় ফুরিয়ে আসছিল। এমন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন, এমন একজন বন্ধুর অনুরোধ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না, যখন সে একটি অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছে।’
সিএনএন ব্রাজিলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘আমি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারিনি। কি হতো যদি ড্যানিয়েলকে আদালত নির্দোষ বলে রায় দিতো। তারচেয়ে বরং আমি তার প্রতি আস্থা রেখেছি, তার থেকে নিজেদের দায় সরিয়ে নিইনি।’ কেবল আর্থিক সাহায্যই নয় নেইমারের পরিবার আইনী সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিল শুরুতে। সর্বশেষ গতকাল সাজা পেয়েছেন আলভেজ, তবুও তার নির্দোষ হওয়ার ব্যাপারে ধারণা তার কাছের বন্ধুটির পরিবারের।
কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় আলভেজ ব্রাজিলে নিজের সম্পদের সাহায্যও নিতে পারেননি। আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইউওএল জানিয়েছে, তার সাবেক স্ত্রী দিনোরাহ সানতানার সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ব্রাজিলে তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আলভেজ ভরণপোষণ না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে এখন মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিনোরাহ। ওই অবস্থায় নেইমারদের মহানুভব আচরণ তার বোঝা কিছুটা হলেও কমিয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল আলভেজের রায় ঘোষণা করা আদালত এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘শারীরিক সম্পর্কের ঘটনায় ভুক্তভোগীর কোনো সম্মতি ছিল না বলে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন।’
এর আগে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর ছুটিতে স্পেনের বার্সেলোনাতেই ওই তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতায় জড়িয়ে পড়েন আলভেজ। পরবর্তীতে সেই ভুক্তভোগী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর আলভেজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে আলভেজও জানান– দুজনের দেখা হয় টয়লেটে। তবে সেখানে কিছুই ঘটেনি। পরবর্তীতে অবশ্য সেই মত পাল্টে ৪০ বছর বয়সী এই তারকা জানান, ‘আমরা উভয়েই নিজেদের মতো করে সময়টা উপভোগ করেছি!’ বার্সা ডিফেন্ডার প্রথম গ্রেপ্তার হন গত বছরের ২০ জানুয়ারি। এরপর থেকেই চলে আসছিল বিচার কার্যক্রম। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলো যাকে বলছিল, দেশটির ইতিহাসের অন্যতম হাই–প্রোফাইল মামলা হিসেবে।