নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছেলেকে না পেয়ে বাবা আওয়ামী লীগের কর্মীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাশকতা চালানোর অভিযোগে দায়েরকৃতৃ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গ্রেপ্তার দেখানোর আগে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির মোন্তাজ আলীকে (৫০) থানায় দুদিন ধরে আটকে রাখারও অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা। মোন্তাজ নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন মুদি দোকানদার। কখনো কখনো গরু-ছাগলেরও ব্যবসা করেন।
মোন্তজাক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনায় এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন আনারও।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, যাকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়ে নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই মোন্তাজ আলী (৫০) ঠিকমতো নামাজই পড়েন না। তার একমাত্র ছেলে রাব্বির বন্ধুরা একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ওই ঘটনায় রাব্বিকেও খুঁজছে। কিন্তু রাব্বি ভয়ে পলাতক রয়েছে। রাব্বিকে না পেয়ে নগরীর শাহ মখদুম থানা পুলিশের একটি দল গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মোন্তাজকে বাড়ি থেকে তুল নিয়ে আসে। এর পর থানায় আটকে রেখে তার ছেলে রাব্বিকে হাজির করার জন্য বার বার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু রাব্বি মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত নয়, বলে সে থানায় হাজির হয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ গত রবিবার সকাল ৯.১০ মিনিটে মোন্তাজকে একটি পুরণো নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ওই গ্রেপ্তার অভিযানে থানার এসআই শরিফুল ইসলাম নেতৃত্ব দেন বলেও আদালতকে অবগত করা হয়।
মোন্তাজের স্ত্রী মাজেদা বিবি বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ আমাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। তখন আমরা সবাই ঘুমিয়ে। এসময় আমার ছেলে রাব্বিকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু রাব্বিকে না পেয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা আছে বলে তাকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। জামাতের সঙ্গে বোমা হামলায় জড়িত আছে বলে আমার স্বামীকে চালান দিছে পুলিশ। কিন্তু জামায়াত-শিবির তো দূরের কথা, আমার স্বামী ঠিকমতো নামাজই পড়েন না। অভাবের সংসার চালাতে রাত-দিন বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করেন। আর তাকেই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাইয়ে দুইদিন থানায় আটকে রাখে পুলিশ।’
মাজেদা আরও বলেন, ‘আমার থানায় গেলে এসআই শরিফুল বুলছিল, ছেলে রাব্বিকে হাজির করেন, তাহলে আমরা তার বাপকে ছেড়ে দিব। কিন্তু রাব্বি ভয়ে থানায় যায়নি। এ রাগে পুলিশ আমার স্বামীকে একটি বোমা হামলার মামলায় নাকি গ্রেপ্তার দেখাইছে। এটা কেমন বিচার হলো? আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। আমার ছেলে দোষ করলে তাকে ধরে নিয়ে যাক, পুলিশ। কিন্তু তার কারণে আমার স্বামীকে কেন ধরে নিয়ে এতো বড় মিথ্যা মামলায় চালান দিল।?
তেরোখাদিয়া এলাকার স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মোন্তাজ শনিবার সকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। তাকে শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে, তার ছেলেকে রাব্বিকে না পেয়ে। আমরা দেখেছি তাকে তুলে নিয়ে যেতে। কিন্তু মোন্তাজ কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। কিন্তু ছেলেকে না পেয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মোন্তাজকে আটকের পরে আমি নিজেও বার বার থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তখন ওসি ইসমাইল হোসেন বার বার আমাকে বলেছিলেন মোন্তাজের ছেলে রাব্বি একটি মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত আছে। তাকে হাজির করে দিলেই আমরা মোন্তাজকে ছেড়ে দিব। কিন্তু রবিবার দুপরে জানতে পারি যে রাব্বিকে না পেয়ে পুলিশ তার বাপকে একটি নাশকতার পুরনো মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দিছে। তখন আমি ওসিকে আবার ফোন করে জানতে চাই, এটা আপনি কি করলেন? একজন নিরপরাধ মানুষকে কেন আপনি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখালেন। এর পর ওসি আমার ফোন কেটে দিয়ে আর ফোন রিসিভ করেননি।’
কাউন্সিলর আনোয়ার আরও বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি। যারা স্থায়ী বাসিন্দা, তারা কে কি করে, সেটা আমরা জানি। মোন্তাজ কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। গত সিটি নির্বাচনেও সে আমার হয়ে কাজ করেছে। কিন্তু সেই ব্যক্তিকেই পুলিশ জামায়াত বানাচ্ছে। এটার সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচার হওয়া দরকার। ’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর শাহ মখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ২৬ নভেম্বর শাহমখদুম থানা এলাকায় একটি নাশকতার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই ঘটনার পরে মোন্তাজ পলাতক ছিল। তাকে শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তেরোখাদিয়া এলাকা থেকে। কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর দাবি সঠিক নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, পলাতক থাকলেও সে এলাকাতেই ঘুরফেরা করছিল। তাই তেরোখাদিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।