সংসদে শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করলেন অর্থমন্ত্রী

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা সাত লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জানান, শীর্ষ ২০ খেলাপির মোট ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আজ মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা তুলে ধরে জানান, সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তাদের খেলাপির পরিমাণ এক হাজার ৫২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। রাইজিং স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৯৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই। তাদের খেলাপি ঋণ ৮৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ক্রিসেন্ট লেদারর্স প্রডাক্ট লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বি আর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এস.এ অয়েল রিফাইনারী লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এস.এম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এহসান স্টিল রি-রোলিং লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং সিদ্দিকী ট্রেডার্সের ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাজমা আকতারের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, কৃষি ঋণের সুদ মওকুফের কোনো পরিকল্পনা নেই। এর কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে মন্ত্রী জানান, ব্যাংক আমানতকারীদের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কৃষকদের ঋণ দেয়। আমানতকারীদেরকে ব্যাংকের সুদ দিতে হয় বলে প্রচলিত নিয়মে ব্যাংকের পক্ষে কৃষকদের মাঝে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা সম্ভব হয় না।

বগুড়া-৫ আসনের হাবিবর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থ বছরে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ঋণ পাওয়া যায়নি। একটি ঋণের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে চলতি অর্থ বছরে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া গিয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের বাস্তবায়নাধীন কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। এই ঋণটি ৫ বছরের গ্রেড পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। সুদের হার এক দশমকি ২৫ ভাগ। সার্ভিস চার্জ শুন্য দশমিক ৭৫ ভাগ এবং অনুত্তোলিত অর্থের ওপর সর্বোচ্চ কমিটমেন্ট চার্জ শুন্য দশমিক ৫০ ভাগ (এই অর্থ বছরে বিশ্বব্যাংক কমিটমেন্ট চার্জ মওকুফ করেছে)।

ঢাকা-৪ আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, চলতি অর্থ বছরে (২০২২-২৩) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৮৫ হাজার ১০২ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। যাতে রাজস্ব বোর্ডের কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছিল তিন লাখ এক হাজার ৬৩৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা। কোভিড পরবর্তী অর্থনেতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী সংকোচনমূলক মুদ্রা নীতি ও ব্যয় সংকোচন নীতি ইত্যাদির কারণে কাপিখত রাজস্ব আদায় কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।

সূত্র: সমকাল