রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কর্মচারী সংকট, এক বছর বন্ধ ক্যাফেটেরিয়ার রাতের খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কর্মচারী সংকটে এক বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার রাতের খাবার বন্ধ রয়েছে। এদিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ খাবারের দোকানগুলো উচ্ছেদের কারণে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস থেকে হলে ফেরার পূর্বেই ডায়নিংয়ের খাবার শেষ হওয়ায় দুর্ভোগের পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের। ক্যাফেটেরিয়া প্রশাসক বলছেন নতুন কর্মচারী নিয়োগ হলেই পুনরায় রাতের খাবার চালু করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় প্রতিদিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী খেতে আসেন। এখানে একজন ম্যানেজার ও পাঁচজন রাধুনিসহ মোট ১৮ জন কর্মচারী রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ২০২০ সালের মার্চে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি বিকেলেও চা-নাস্তার ব্যবস্থা ছিল। রাত ১০ পর্যন্ত ক্যাফেটেরিয়া চালু থাকত। রাতের মেন্যু হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ভর্তা ও ভাজিসহ ২০টাকার একটি খাবার প্যাকেজ পরিবেশন করা হত। কিন্তু গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাফেটেরিয় পুনরায় চালুর পর রাতের প্যাকেজটি বন্ধ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাজারো শিক্ষার্থী আড্ডা দেন। ফলে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ দোকান ও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় তারা রাতের খাবার খেতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে ক্যাফেটেরিয়ার রাতের খাবার। এদিকে গতমাসে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে অভ্যন্তরীণ খাবারের দোকানগুলোও উচ্ছেদ করে প্রশাসন। এতে করে চরম দুর্ভোগে পরেছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন- ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরতে একটু দেরি হলেই ডায়নিংয়ে খাবার পাওয়া যায় না। ফলে তাদেরকে ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলগুলোতে চড়া দামে খাবার খেতে হয়। এছাড়াও খাবার শুরু হওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায় দুপুরের ২৮ টাকা মূল্যের সাধারণ মিল। ফলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে স্পেশাল খাবার খেতে হয়। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াস বলেন, ‘আগে যখন ক্যাফেটেরিয়ায় রাতের খাবার চালু ছিল তখন নির্দিধায় ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে পারতাম। কারণ তখন খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। কিন্তু এখন বন্ধুদের সাথে অল্প কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পরেই মনে হয় হলে তো খাবার পাব না।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আহাদ ইসলাম বলেন, ‘আগে আমাদের রিহার্সেল শেষ করতে যখন রাত হয়ে যেত তখন সবাই মিলে ক্যাফেটেরিয়ায় একসাথে খেতাম। কিন্তু করোনার পর রাতের খাবারটি বন্ধ হওয়ায় আমরা আর দীর্ঘ সময় গান-বাজনা করতে পারি না। সন্ধ্যার পরপরেই সবাই বলতে শুরু করে ভাই, হলে যেতে হবে। নইলে খাবার পাব না। এতে ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক একেএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইদানিং দেখতে পাচ্ছি ক্যাফেটেরিয়ায় পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী খেতে আসছেন। কিন্তু সেই অনুপাতে আমাদের কর্মচারী নেই। মূলত এই সংকটের কারণে আমরা রাতের খাবার বন্ধ রেখেছি। আর বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার কারণে চাইলেও লোকবল বাড়াতে পারছি না। আমরা লোকবল নিয়োগের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আমাদেরকে আশ^স্ত করেছেন। নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিলে আমরা ফের রাতের খাবার চালু করব।’

সার্বিক বিষয়ে রাবি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক নূর বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করবো। নিয়মিত দৈনিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হলেও রাতে ক্যাফেটেরিয়া চালু রাখা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

জি/আর