বৃহস্পতিবার , ২৮ জুলাই ২০১৬ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

শিশু নির্যাতন এখনই রুখে দিতে হবে

Paris
জুলাই ২৮, ২০১৬ ৬:৪৪ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু নির্যাতন। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও শিশু নির্যাতিত হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় আমরা দিন থেকে দিন অমানবিক হয়ে যাচ্ছি।

সামিউল আলম রাজন ও রাকিব হাওলাদারের কথা মনে আছে? রাজনকে সিলেটে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর খুলনায় রাকিবকে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই দুই ঘটনার পর থানায় মামলা হয়। সরকারের আন্তরিকতায় খুব কম সময়ের মধ্যে মামলা দুটির বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। রাজন হত্যায় চারজন ও রাকিব হত্যায় দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। তবে রায় কার্যকরের ব্যাপারে গণমাধ্যম আর তেমন কোনো সংবাদ দেখা যায়নি।

বিচারের দীর্ঘসূত্রতার যে অভিযোগ সাধারণত করা হয়, রাজন ও রাকিব হত্যায় অন্তত সেই অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া গেছে। আপাতদৃষ্টে তখন মনে হয়েছিল হয়তো শিশু নির্যাতন কিছুটা কমবে। রাজনকে গত বছরের ৮ জুলাই এবং রাকিবকে গত বছরের ৩ আগস্ট হত্যা করা হয়।

বলে রাখা ভাল যে, রাজন-রাকিবের মতই অনেক শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে দেশে। কিন্তু এই দুটি ঘটনায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে বলে উদাহরণ হিসেবে এই দুই ঘটনাকেই বেছে নেয়া হলো।

এতক্ষণ তো দূর অতীতের স্মৃতিতে ডু্বে ছিলাম, এবার একটু নিকট অতীতের দিকে চোখ দেই। ২৪ জুলাই, ২০১৬, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যাত্রামোড়া এলাকার জোবেদা টেক্সটাইল অ্যান্ড স্পিনিং ফ্যাক্টরি। ১০ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক সাগর বর্মণ। পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। মামলাও হয়েছে এবং মামলায় এই পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাজন কিংবা রাকিব হত্যার বিচার ত্বরান্বিত হওয়ার ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। বলা যায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার কারণেই খুব দ্রুত বিচারের রায় আসে। অন্যান্য হত্যার ঘটনার মতো এই হত্যাগুলোর পরও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু গণমানুষের চাপে তা শেষ পর্যন্ত টেকেনি।

কিন্তু সবচেয়ে যে বিষয়টা আমাকে ভাবাচ্ছে, তা হলো রূপগঞ্জে সাগর হত্যার পর সামাজিক মাধ্যমে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিনি। মনে হয়েছে গণমানুষ ব্যাপারটা সম্পর্কে জানেও না। রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর রাজন হত্যার পরপরই ঘটেছে রাকিব হত্যা। তরতাজা ঘটনা হওয়ায় মানুষজন রাজন হত্যার পাশাপাশি রাকিব হত্যার বিচারে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু শিশু হত্যার চেয়ে ভয়াবহ এবং উদ্বেগজনক ঘটনা দেশে এখন ঘটে যাচ্ছে। এর নিচে শিশু শ্রমিকের লাশ চাপা পড়ে গেছে।

জঙ্গি সমস্যার কথা বলছি। হ্যাঁ, জঙ্গি সমস্যার সমাধান অবশ্যই একদিন হবে। কিন্তু এই যে সহিংস মানসিকতা নিয়ে সমাজের ভিত গড়ে উঠছে তা কিন্তু শেষ হবে না। জঙ্গি সমস্যা বৈশ্বিক সমস্যা। সারা বিশ্বকে এক কাতারে দাঁড়িয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু শিশু নির্যাতন আমাদের দেশিয় সমস্যা। আর তার সমাধানে সচেতন সব নাগরিকের এগিয়ে আসা উচিত। তাই সাগর হত্যার পর কোনো ধরনের নাগরিক প্রতিক্রিয়া না দেখে অবাক হয়েছি। ভয় হয়, জঙ্গি জঙ্গি করে না আবার পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সংক্রামক। যে সংক্রামকের কার্যত কোনো চিকিৎসা নেই এবং যা জঙ্গির চেয়ে ভয়াবহ হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চলতি বছরের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই সময়ে ২৫০টি শিশুকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ৯ জনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়, ৩ জনকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়, ধর্ষণ শেষে আত্মহনন করেছে এক শিশু, শারীরিক নির্যাতনের পর নিহত হয়েছে এক গৃহকর্মী। অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছে ১২ জন গৃহকর্মী।

এ ছাড়া রহস্যজনক মৃত্যু, শিক্ষকের নির্যাতনে মৃত্যু ও অন্যান্য কারণে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। আর এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০৪টি। অন্যদিকে শিশুদের উপর সহিংস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এই ছয় মাসে সবেচেয়ে বেশি। ৫৯১ জন শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। আর এ সব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪৯টি।

পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় দেশে শিশু নির্যাতন থেমে নেই। কিন্তু শিশু নির্যাতনরোধে এখনই সোচ্চার হওয়া জরুরি। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ এমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে কঠোর হওয়া জরুরি। শিশুকে তার অধিকার অনুযায়ী বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রত্যেকটা শিশুর রয়েছে।কিন্তু সব শিশু সে অধিকার পায় না। খেয়াল করলে দেখা যাবে যেসব শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার শতকরা ৯৯ ভাগই হলো নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। একেবারে খেটে খাওয়া। অথচ এই শিশুগুলোর জন্য এই পৃথিবী হওয়ার কথা ছিল ‍সুন্দরে ভরপুর। যে বয়সে সুস্থ ‍ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার কথা ছিল, সে সময়ে পেটের দায়ে কাজে নেমে যাচ্ছে। এটাই তো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। আমরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি। তার ওপর তাদের নির্যাতন করে মেরে ফেলা হচ্ছে।

রূপগঞ্জের ঘটনায় কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন ব্যাপারটা স্বাভাবিকই। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটা একদিন অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে, যদি না এখনই তা রুখে দেওয়া যায়। প্রকৃত অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া ইতোপূর্বে যেসব শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে সেগুলোরও বিচার দ্রুত শেষ করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যেন পরবর্তী সময়ে শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ কেউ না করে। অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক বিচার বিভাগের দায়িত্ব ন্যায় বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে আইনের আওতা আনা।

সূত্র: রাইজিংবিডি

সর্বশেষ - জাতীয়