বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে কাল সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায়। শুক্রবার রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে প্রথমে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরপর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদের সঙ্গে সংলাপ হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ সাত জ্যেষ্ঠ নেতা রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেবেন। অন্য ছয়জন হচ্ছেন—মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম।
এর আগে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টি পাঁচ দফা প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবগুলো হলো—১. সংবিধান অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন নিয়োগসংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন করা, ২. আইনে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখার বিধান রাখা, ৩. নির্বাচন কমিশনের আলাদা সচিবালয় করা, ৪. বর্তমান সংসদেই এই আইন পাস করা এবং ৫. নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা মূল্যায়নে ৯টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া। এই ৯টি বিষয়ের মধ্যে ছিল—নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স, পেশাগত যোগ্যতা, নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা এবং চারিত্রিক স্বচ্ছতা।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। তবে বিএনপি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকায় ওই সংলাপ থেকে কার্যকর কোনো ফল বেরিয়ে আসেনি।
দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়। চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়। প্রথম দিন সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। এরপর ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ২২ ডিসেম্বর জাসদ (ইনু) সংলাপে অংশ নেয়। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি সংলাপে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। এক মাসে পাঁচ দফায় এ সংলাপ হয়।
এবারের সংলাপ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ প্রক্রিয়াকে আমরা একেবারেই সমর্থন করি না। আমরা গত সংলাপেও একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম রাষ্ট্রপতিকে। সে প্রস্তাব অনুসারে কাজ হয়নি। আর এবার তো প্রশ্নই ওঠে না। এবার যে প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে, সেটি তো গতবারও হয়েছিল। তাতে তো কোনো লাভ হয়নি। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন তৈরি করতে পারেননি।’
এদিকে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একাংশ ইসি গঠনে সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের আইনমন্ত্রীও আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেননি। তবে সময় স্বল্পতার কারণে এবার আইন প্রণয়ন সম্ভব না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এ কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ