সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
রহস্যজনক কারণে দুই বছর ধরে অনলাইন ওয়েব সার্ভারের বিল পরিশোধ করছে না রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিল পরিশোধ করতে মার্কেটিং বিভাগকে বারবার চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি সংশ্লিষ্টরা। ১০ আগস্টের মধ্যে বিল পরিশোধ না করায় বিমানের সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছে অ্যামাজন ওয়েব কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১১আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিমানের সার্ভার বন্ধ করে দিয়েছে অ্যামাজন।
বিমানের ফাইন্যান্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১ বছর ৫ মাসে জ্যাপওয়েজ কোম্পানির সাইট থেকে কোনো আয় না হলেও বিমান চুক্তি অনুযায়ী তাদের ৪ কোটি টাকা বিল দেয়। অপরদিকে দেশীয় কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার করে এক বছরে ১২৫ কোটি টাকা আয় করলেও তাদের প্রাপ্য ৯০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেনি। যদিও জ্যাপওয়েজ কোম্পানির সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানের এক বছরে সাশ্রয় হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা।
বিমানের আইটি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একযোগে অচল হওয়ার পথে বিমানের সব ধরনের অনলাইন টিকিট বিক্রির কার্যক্রম। এতে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের বিপাকে পড়তে যাচ্ছে বিমান। বছরে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকার অনলাইন টিকিট বিক্রির কার্যক্রম এখন হুমকির মুখে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে বিমানকে কোনো ধরনের কমিশন দিতে হয় না। কিন্তু জিডিএস ও ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হলেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে কমিশন ও চার্জ দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। যার একটি অংশ যাচ্ছে বিমানের মার্কেটিং বিভাগের অসাধু সিন্ডিকেটের পকেটে। বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বাধ্য হয়ে অনলাইন মার্কেটিং শুরু করে বিমান। জ্যাপওয়েজকে বাদ দিয়ে নতুন করে অত্যাধুনিক সাইট তৈরি করা হয়। কারণ জ্যাপওয়েজের সফটওয়্যারটি ছিল ভুলে ভরা। সাইটটি থেকে রিফান্ড করা যেত না, টিকিট ইস্যু-রিস্যু করা যেত না, চালানো যেত না মোবাইল অ্যাপস। সেই সঙ্গে ভুলের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, এই খাতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতো বিমানের।
২০১৯ সালের মে মাসে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জ্যাপওয়েজের সঙ্গে করা চুক্তিটি বাতিল করে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ট্রাভেল শপ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বিমান। চুক্তি অনুযায়ী ট্রাভেল শপ ২০১৯ সালে আক্টোবর মাসে বিমানের মোবাইল অ্যাপস বাজারজাত করে ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জ্যাপওয়েজকে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অনলাইন বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৫ কোটি টাকা। আর বিক্রীত টিকিটের সংখ্যা হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৭টি। আগামী এক বছরের মধ্যে এই বিক্রির পরিমাণ ৫শ কোটি টাকা ছাড়ানোর টার্গেটও দেয় তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে চালু করার প্রথমদিকে এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জ্যাপওয়েজকে প্রতিস্থাপন করার পর কিছু ত্রুটি ধরা পড়লেও ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় নির্ভুলভাবে বিমানের সব ধরনের অনলাইন পরিসেবা চালু হয়। টিকিট বিক্রি ছাড়াও এই অনলাইনের মাধ্যমে যাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইনের রিফান্ড, রি-ইস্যু, সিট সিলেকশন, বুক নাও পে-লেটার ছাড়াও নানাবিধ সুবিধা পাচ্ছিলেন। এতে দিন দিন বাড়ছিল অনলাইনের কদর।
কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই অ্যাগ্রেসিভ অনলাইন মার্কেটিংয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এই খাতে থেকে তাদের কোনো ধরনের উপরি আয় হচ্ছিল না। একই সঙ্গে ওই সফটওয়্যার তৈরিতে বিমানের কোনো অর্থ খরচ হয়নি। এতে উপরি আয়েরও সুযোগ পায়নি কেউ। এ কারণে ঘুষ কমিশনভোগী শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি সচল ও সফলভাবে বাস্তবায়িত সফটওয়্যারটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এর অংশ হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসার্ভার, গুগুল প্লে-স্টোর, অ্যাপল অ্যাপস্টোরের কোনো বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি। উলটো সিন্ডিকেট অন্য একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকায় আরেকটি ই-কমার্স সফটওয়্যার কেনার পাঁয়তারা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিগগির এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। এমন প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে।
সার্ভার বন্ধের বিষয়ে জানতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: যুগান্তর