‘বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ’

শাহিনুল আশিক:


‘জোরে শব্দ হচে (হয়েছে)। দোরে অ্যাসি (দৌড়ে এসে) দেখি আগুন জ্বলছে। মাইক্রোর ভেতরে মানুষ ছটপট কইরছে (করছে)। সেই কি করুন দৃশ্য। আমি জীবনেও দেখিনি। আমি নিজের চোখে মানুষ গিলিখে (গুলোকে) মরতে (মোরতে) দেখনু (দেখলাম)। কাছে য্যাতে (জেতে) পারিনি, আগুন জ্বলছে তাই।



শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালীতে দুর্ঘটনায় গাড়িতেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ১৭ জন যাত্রী। দুর্ঘটনার শব্দে পাশে থেকে ছুটে আসা করিব হোসেন নিজের চোখের সামনে জ্বলে-পুড়ে মরে যাওয়ার দৃশ্যগুলো এভাবেই বলছিলেন।

করিব হোসেন আরও বলেন- বাস তো খ্যাদে (খাদে) নামি (নেমে) গেছে। বালুর উপরে দেখছি একজন (৪৫ বছর বয়স আনুমানিক) (মৃত মানুষ) পড়ি (পড়ে) আছে। এ্যার (এর) পরে রাস্তার উপরেও দেখছি তিন-চারজন পড়ি (পড়ে) আছে। আর গাড়িতে (মাইক্রোবাসে) আটকি (আটকে) থাকা মানুষগিলি (মানুষগুলো) বাড়ানির (বের হওয়ার) চেষ্টা করছিলো। তখন একজনকে ব্যার (বের) করতে পারিছিনু (পেরেছিলাম)।

স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান- আমরা আসতেই দেখি দাও-দাও করে আগুন জ্বলছে মাইক্রোবাসে। মাইক্রোবাসের আগুন থেকে সামনের রাখা ইমাগাড়িতেও ছড়িয়ে পরে। এতে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন বাস থেকে কয়েকজন মানুষ নেমে পড়ে। এর পরে কে বা কারা ফায়ার সার্ভিসসে ফোন দেয়। দ্রুতই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। আর ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মীরা রাস্তায় পাড়ে থাকা মানুষগুলোতে তাদের গাড়িতে তুলছিলেন।



তিনি আরও বলেন- চোখের সামনে মানুষগুলো পুড়ে মরলো। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কিই বা হতে পারে। লাশের পোড়া গন্ধে মূহুর্তেই চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে যায়। অনেক দূর থেকে পাওয়া যাচ্ছে এই পোড়া গন্ধ।

কাটাখালী থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে বানেশ্বরের দিক থেকে আসছিলো একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস। আর রাজশাহীর দিক থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল হানিফ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৮১০) একটি বাস। বাসটির সাথে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পরে মাইক্রোবাসটি অনেকটাই পিছনের দিকে সরে আসে। আর হানিফ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা দক্ষিণপাশে পড়ে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা গেছে, সংঘর্ষের পর পরেই মাইক্রোবাসটিতে আগুন লক্ষ্য করা যায়।এর ৫ সেকেন্ডের মধ্যে পেছনের দিকে আগুন দেখা যায় (যেখানে গ্যাসের সিলিন্ডার থাকে)। আর সংঘর্ষের ৯ সেকেন্ডের মধ্যে কয়েকজন মানুষ ছুটে আছে। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি এক শিশুকে কোলে তুলে নেয়। তার সামনে আরও একজন মানুষ পড়ে ছিলো। আর বাসের পেছনে আরও একটি মানুষ পড়েছিলো। তাকেও অন্য একটি ব্যক্তি উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে সাধারণ মানুষ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছাড়াও পুলিশ আহত নিহতদের উদ্ধার।

প্রসঙ্গত, সংঘর্ষের পরে মাইক্রোবাসে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে মাইক্রোবাস থেকে ১১ যাত্রীর পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দগ্ধ ছয়জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার ১১ লাশের কাউকে চেনা যাচ্ছে না। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই ১১ জনের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ‍৪ জন নারী ও ২ জন শিশু শনাক্ত করা হয়েছে।

স/আ