ধর্মীয় অনুশাসনে বেড়ে ওঠা : আমি একটি খ্রিস্টান ধার্মিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। আমাদের সব কিছুতেই ধর্ম জড়িয়ে ছিল। যুবক বয়সে আমি ধর্ম পালনে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলাম এবং চার্চে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঘরে টেলিভিশন ছিল না। সময় কাটাতে হাতের কাছে যে বই পেতাম সেটাই পড়তাম। ধর্মীয় বইগুলোও বাদ যেত না।
সত্যের খোঁজে অবিরাম চেষ্টা : ১২ বছর বয়সে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপারে আমার প্রচণ্ড সংশয় তৈরি হয়। ১৪ বছর বয়সে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, খ্রিস্ট মতবাদ সত্য নয়। তবে আমি খ্রিস্ট মতবাদের বিকল্পও কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখন থেকে আমি নিজের বিশ্বাস ও চিন্তার আলোকে একটি ধর্মের কাঠামো কেমন হওয়া উচিত, তা দাঁড় করানোর চেষ্টা শুরু করলাম। কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি মানুষের জ্ঞাত হতে হবে, তার লেখ্য উপাদানগুলো সুসংহত হবে, প্রকৃতিগুলো সঠিক হবে, ধর্মের বিধানগুলো যৌক্তিক ও মানুষের সাধারণ প্রকৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে এবং সর্বোপরি তা অবশ্যই একত্ববাদে বিশ্বাসী হবে।
প্রাচীন ধর্মে সত্যের অনুসন্ধান : আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার তৈরি অবকাঠামো প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে পাওয়া যাবে। কিন্তু যেসব প্রাচীন ধর্ম নিয়ে আমি চিন্তা-গবেষণা করেছি তার সবগুলো বহুশ্বেরবাদী। ভুল ধারণাবশত আমি ইসলাম নিয়ে কোনো অনুসন্ধান করিনি। কিছুদিন পর আমার ভেতর হতাশা তৈরি হয়। হয়তো আমি কাঙ্ক্ষিত সত্য খুঁজে পাব না। বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদী হয়ে ওঠার পর যখন জানতে পারলাম এটি আমার কাঙ্ক্ষিত সত্য নয়, তখন খুব বেশি হতাশ হলাম।
জাপানে ভিন্ন পরিবেশের প্রভাব : হাই স্কুলের শেষ বছরটি আমি জাপানে কাটাই। এটা আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। সামাজিক মূল্যবোধ, নারীবাদ ও পরিবারের ধারণা বিষয়ে আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। জাপানে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, নারী-পুরুষ অভিন্ন না হয়েও সমান ভূমিকা পালন করতে পারে। সেখানে পারিবারিক সংহতি ও পারিবারিক সহযোগিতার যে রূপ দেখেছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পশ্চিমা বিশ্বে তার অভাব রয়েছে। এ সময় বৌদ্ধ ধর্ম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যদিও সেটা খুব বেশি দিন ছিল না। কেননা ভেতরে অনুভব করছিলাম, এটা আমার প্রত্যাশিত সত্য নয়।
মুসলিম পরিবারের আতিথেয়তায় সত্যের সন্ধান : যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর আমি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই এবং একজন মেকানিক সম্পর্কে জানতে পারি যে তিনি নিজ বাড়িতে স্বল্প খরচে গাড়ি ঠিক করে দিতে পারবেন। গাড়ি নিয়ে তাঁর বাড়ি যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী আমাকে ঘরের ভেতরে ডাকলেন এবং চা পানের আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি লম্বা স্কার্টের সঙ্গে লম্বা স্কার্ফ পরেছিলেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকায় এমন পোশাক দেখেছিলাম। আমি তাঁর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলাম এবং তাঁর দেওয়া উত্তরে আমার তৈরি অবকাঠামো খুঁজে পাচ্ছিলাম।
ভদ্র মহিলার স্বামীর কাজ শেষ না হওয়ায় তিনি আমাকে তাঁর ঘরে অনুষ্ঠিতব্য নারীদের সাপ্তাহিক শিক্ষা আসরে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এর পর থেকে প্রায় ছয় মাস আমি তাঁদের বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। একদিন তিনি বলেন, আপনি প্রস্তুত হলে ‘কলেমা শাহাদাত’ পাঠ করুন। আমি রাজি হলাম। কেননা ছয় মাসের অনুসন্ধানে বুঝতে পারি, যে সত্যের সন্ধান আমি করছি তা ইসলাম।
ইসলাম নিয়ে গভীর অধ্যয়ন : ইসলাম গ্রহণের পর বুঝতে পেরেছিলাম, ইসলাম সম্পর্কে আমার জানার বহু কিছু আছে। সেসব বিষয় না জানলে আমি যথাযথভাবে ইসলাম প্রতিপালন করতে পারব না। ফলে ইসলাম সম্পর্কে পড়তে চাইলাম। কিন্তু সাহায্য করার মতো লোক ছিল না। মসজিদে যেসব আরব ও পাকিস্তানি নারী আসতেন তাঁরা ইংরেজি জানতেন না। ফলে আমাকে কিছুটা ধীরে চলতে হলো। এরপর আমি আরবি ভাষা শিখলাম ও আরবিতে রচিত ইসলামী বইগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। ধর্মীয় পাঠ ও বই নির্বাচনে মিসরকে প্রাধান্য দিলাম।
হিদার শো লিখিত ডিসকোভারিং ইসলাম থেকে আবরার আবদুল্লাহর ভাষান্তর
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ