দ. কেরাণীগঞ্জের ওসি-দুই ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

এক নারীকে অপহরণের অভিযোগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি ও দুই ইন্সপেক্টরসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাবাসুম ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন কেরানীগঞ্জের এক নারী। তিনি পার্লারে চাকরি করেন।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল -৪ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ ফোরকান মিঞা।

মামলার আসামিরা হলেন- কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন (৫৫), ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তুহিন রেজা (৪০), রাহাত ওরফে ডাকাত রাহাত (৩৫), জি এম সারোয়ার (৫৫), দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) শাহাদাত হোসেন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশিকুজ্জামান ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ জামান। মামলায় আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, এ মামলার অভিযোগকারী দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি গণধর্ষণ মামলারও বাদী। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। ওই মামলায় ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার অপর আসামিরা পুলিশের সহযোগিতায় প্রাকশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও হুমকি দিচ্ছে।

বাদীর অভিযোগ, তাকে ২১ জুলাই অস্ত্রের মুখে হত্যার হুমকি দিয়ে দুই সন্তানকে রুমে তালাবদ্ধ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১০ হাজার টাকা দিলেও তাকে অপহরণ করে প্রথমে ইকবাল চেয়ারম্যানের তেলঘাটের অফিস ও পরে একটি গাড়িতে তুলে পল্টনের বিজয়নগর সাইমন স্কাইভিউ টাওয়ারের সাততলায় একটি কক্ষে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।

সেখানে জোর করে ইকবাল চেয়ারম্যান, জি এম সারোয়ার ও তুহিন রেজাসহ কয়েকজন তাদের শেখানো কথা রেকর্ড করিয়ে নেয়। এরপর ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়।

মামলায় বাদীর অভিযোগ, ২৩ জুলাই ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ারের নির্দেশে রাহাত ডাকাত তাকে আবারও অপহরণ করলে মামলার আসামি তিন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাদের সঙ্গে চলে যেতে বলেন।

এরপর তারা নজরুল ইসলাম সরণির আক্রাম টাওয়ারের লিফটের সাততলার একটি রুমে বসায়। পরে সেখান থেকে নিয়ে রমনা থানা এলাকার একটি মদের বারে বসায়। এ সময় ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা ও জি এম সারোয়ার ২৬ জুলাই কোর্টে গিয়ে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিতে চাপ দেয়। নয়তো অবৈধ মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। এরপর তারা ও তিন পুলিশ ২২ ধারায় জবানবন্দি করোনার কথা বলে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়।

অভিযোগে বলা হয়, ২৬ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বাসায় এসে রাহাত ডাকাতসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের হাতে তুলে দিয়ে বলে যে, ‘ওকে কোর্টে নিয়া যাবি। ও যেন পালাতে না পারে।’ এরপর কড়া পাহারার মধ্যে আমাকে কোর্টে নিয়ে সাত-আটটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়।

ভুক্তভোগী বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন দুপর ১২টার দিকে কোর্টে এসে আমাকে বলে যে, ‘যদি চালাকি করিস তবে তোর দুই মেয়েকে জীবনের তরে হারাতে হবে। ইকবাল চেয়ারম্যানের লোক দিয়ে তোর মেয়েদের হত্যা করে ফেলব।’ আমি নিরূপায় হয়ে তাদের শেখানো কথা আদালতের কাছে বলি। এরপর মামলা তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে গেন্ডারিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে বেশকিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

 

সূত্রঃ যুগান্তর