প্রস্তাবিত বাজেটে রিকন্ডিশন্ড বা একবার ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির ওপর শুল্কহারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গাড়ির অবচয় সুবিধার ক্ষেত্রেও হেরফের হয়নি। তবে যেই দামের ওপর নির্ভর করে কাস্টমসে শুল্কায়ন হয়; সেই জাপানের ‘ইয়েলো বুকে’ গাড়ির দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই অবস্থায় আগের চেয়ে গাড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে।
আর কেনার পর গাড়ির সরকারি নিবন্ধন ফি ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় গাড়ির দাম আগের মতো থাকলেও এখন থেকে নিবন্ধনে বাড়তি খরচ গুনতে হবে; একই সঙ্গে যাঁরা আগে থেকে গাড়ি ব্যবহার করছেন তাঁদেরও ওই বাড়তি খরচ গুনতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের বাজারে রিকন্ডিশন্ড জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের ‘প্রিমিও’ এবং ‘এলিয়ন’ কারের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। এই দুই মডেলের গাড়িতে বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে; আর গ্রেডভেদে দাম এক থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবধান হয়।
চট্টগ্রামের ম্যাক্সিম কারের কর্ণধার সুজাউদ্দিন মামুন বলেন, ২০১৮ মডেলের হাই গ্রেডের (এফইএক্স প্যাকেজ) একটি প্রিমিও কারের দাম এখন ৩৭ লাখ টাকা। বাজেটে শুল্কহার এবং অবচয়ে কোনো পরিবর্তন না হলেও জাপানের ইয়েলো বুকে প্রতি গাড়িতে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। প্রতিবছরের নিয়মানুযায়ী নতুন প্রকাশিত ইয়েলো বুক ১ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমসে দেওয়া হয়েছে। এই বইয়ে প্রকাশিত দামের ওপর শুল্কায়ন করে কাস্টমস।
সুজাউদ্দিন বলছেন, ইয়েলো বুক ছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে বিআরটিএ নিবন্ধন ফি বাড়ানোর কারণে প্রিমিও মডেলের গাড়িতে বাড়তি ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ নতুন গাড়ি নিবন্ধন, ফিটনেস এবং ট্যাক্স টোকেন নিতে আগে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা গুনতে হবে। এ ছাড়া গাড়ি মালিকদের প্রত্যেকেই প্রতিবছর ট্যাক্স টোকেন নবায়নের জন্য বাড়তি ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এসব কারণে গাড়ি কেনার প্রতি আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এখন তো গাড়ি বিক্রি নেই বললেই চলে; মানুষ গাড়ি কিনবে কোত্থেকে। যাঁরা গাড়ি কেনার সামর্থ্যবান তাঁরা তো জরুরি প্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে আবার কখন গাড়ির বাজার আগের অবস্থায় ফিরবে তা বলা মুশকিল।
কে কে অটোমোবাইলসের কর্ণধার ও বারভিডার সিনিয়র সহসভাপতি এস এম আনোয়ার সাদাত বলেন, কভিড-১৯ পরবর্তী গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকঋণ। গ্রাহকরা ৩০-৩৫ লাখ টাকা দিয়ে যে গাড়ি কেনেন; তার পুরোটাই নগদ দিতে পারেন না। ফলে তাঁকে ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয়। বাকি টাকা গ্রাহক নিজে নগদে পরিশোধ করেন। কিন্তু ৫০ শতাংশ ঋণ পেতেই গ্রাহককে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গাড়ি কেনায় ঋণ প্রদানে কোনো বাধা না থাকলেও সুদের হার ৯ শতাংশে নির্ধারণের পর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে গড়িমসি করে। অথচ এই ঋণে গ্রাহক কখনো অনাদায়ি থাকে না। সরকার যদি মধ্যবিত্তদের জন্য ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
বর্তমান বাজেটে, অবচয় বা ডেপ্রিসিয়েশন হার হচ্ছে এক বছরের পুরনো গাড়ির জন্য শূন্য শতাংশ অর্থাৎ কোনো অবচয় সুবিধা নেই। দুই বছরের পুরনো গাড়ির জন্য ১০ শতাংশ, তিন বছরের পুরনো গাড়ির জন্য ২০ শতাংশ, চার বছরের পুরনো গাড়ির জন্য ৩০ শতাংশ এবং পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ির জন্য ৩৫ শতাংশ। পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানির সুযোগ নেই। গাড়ির অবচয় সুবিধা যত বেশি থাকবে; গাড়ির দাম ততই কম হবে।
বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কহার অনুযায়ী, ১৬ শ সিসি পর্যন্ত আমদানীকৃত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ, ২ হাজার সিসি পর্যন্ত সম্পূরক শুল্কহার ১ শ শতাংশ, ৩ হাজার সিসি পর্যন্ত ৩৫০ শতাংশ, ৪ হাজার সিসির ঊর্ধ্বে ৫ শ শতাংশ। আর ১৮ শ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্কহার ৪৫ শতাংশ এবং ২ হাজার সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্কহার ৬০ শতাংশ। এই শুল্কহার এবারও বহাল আছে।
বারভিডার সাধারণ সম্পাদক ও ফোর হুইলার্সের কর্ণধার হাবিবুর রহমান মনে করেন, পরিস্থিতি উত্তরণে জাপানের ইয়েলো বুকে প্রকাশিত দামের ওপর ২৫ শতাংশ ডিলার্স কমিশন দিলে দেশের বাজারে গাড়ির দাম নাগালের মধ্যে আসবে; গাড়ি বিক্রির পরিমাণ বাড়বে তাই রাজস্বও বেশি পাবে সরকার।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ