করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীতে বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক দেশের সরকার অনলাইন ক্লাশের আয়োজন করেছে। কিন্তু সবার পক্ষে তো আর ঘরে বসেই অনলাইন ক্লাশে অংশ নেয়া সম্ভব নয়।
তাই বেছে নিতে হচ্ছে বিকল্প উপায়। তাদের একজন ভারতের বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা শিক্ষার্থী শ্রীরাম হেজ। যার বাসায় ইন্টারনেট নেটওর্য়াক ঠিক মতো কাজ করে না। কিন্তু সে থেমে থাকার নয়। ভালো সিগন্যাল পাওয়ার জন্য ওই যুবককে গাছের উপর উঠতে হয়। ক্লাশে অংশ নেয়ার জন্য গাছের মগডালে ঝুলে থাকতে হয় টানা তিন ঘণ্টা। আর ওই গাছে চড়ার জন্য রোজ এক কিলোমিটার হাঁটতে হয় তাকে।
শ্রীরাম হেজ ভালো নেটওয়ার্ক বা হাইস্পিড ইন্টারনেট পেতে বাড়ি থেকে এক কলোমিটার পথ হেঁটে, পাহাড়ের উপর একটা উঁচু গাছের মগডালে চড়ে বসেন। উঁচু ওই গাছের মগডালে ঝুলে ঝুলেই ৩ ঘণ্টা করে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করছেন তিনি। একহাতে শক্ত করে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরে অন্য হাতে স্মার্টফোনে দিব্যি অনলাইন ক্লাস করছেন ওই যুবক!
জানা গেছে, শ্রীরাম হেজ স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন অনলাইন ক্লাস করছেন।
শ্রীরাম বলেন, গ্রামে শুধুমাত্র বিএসএনএল-এর নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। আর ইন্টারনেটের ভালো সিগন্যাল পাওয়ার জন্য তাকে ওই গাছের উপর উঠতে হয়। প্রতিদিন তিনটি করে ক্লাস করতে হয়। ক্লাস শুরু হয় সকাল থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত। ফের বেলা তিনটা থেকে আর একটা ক্লাস শুরু হয়।
দুপুরে রোদে গাছে উঠে ক্লাস করা খুবই কষ্টকর! তবুও কোনও উপায় নেই। দুপুরের গরম সহ্য করে ৩ ঘণ্টা ক্লাস করে নিচ্ছেন শ্রীরাম। কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টি নামলে কীভাবে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করবেন, তা নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই যুবক।
এদিকে, বাঁকুড়াতে এভাবেই শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নিচ্ছেন এক শিক্ষক।
দেশে চলছে লকডাউন। স্কুল, কলেজ খুলতে এখনও অনেক দেরি। কিন্তু তা বলে পড়াশোনা বন্ধ রাখলে তো চলবে না। তাই শিক্ষকরা এখন ক্লাস নিচ্ছেন অনলাইনে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ছাত্র পড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র যে ফোনের নেটওয়ার্ক ভালো থাকবে, তা তো নয়। আর ভিডিও কনফারেন্সের জন্য দরকার হাইস্পিড ইন্টারনেট। অনেকেই সেটা সময়মতো পাচ্ছেন না। তাই ক্লাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে।
কিন্তু বাঁকুড়ার এ নাছোড়বান্দা শিক্ষককে দেখলে যে কেউ চমকে যাবেন। ঘরে ইন্টারনেট নেই বলে এ শিক্ষক চড়েছেন গাছের ডালে। সেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে, আর সেখান থেকে বসেই ক্লাস নিচ্ছেন বাঁকুড়ার শিক্ষক সুব্রত পতি।
তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ন’টা থেকে সন্ধ্যে ছ’টা পর্যন্ত আমি গাছের ওপরে বসে বিভিন্ন ক্লাস নিচ্ছি। গাছের ওপর বসাতে আর নেটওয়ার্কের কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
নিজের স্মার্টফোন ব্যবহার করেই পতি দিনের বেশিরভাগ সময়টা ছাত্র পড়িয়ে কাটাচ্ছেন।
বাকুরার অনলাইন পত্রিকা News 18 দক্ষিণবঙ্গ জানায়, আপাতত বেশ কিছুদিন এভাবেই গাছের ডালে চড়ে ক্লাস নিতে হবে সুব্রতকে।
সূত্রঃ সময়