নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৬ মাস আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের চার অসহায় নারীকে সরকারি সহায়তার জন্য ভিজিএফ’র কার্ড করে দেওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। কিন্তু ওই চার নারীই জানতেন না তাঁদের নামে ভিজিএফের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। যার বিপরীতে তাঁরা প্রত্যেকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন।
তবে তাঁরা না জানলেও প্রতি মাসে তাঁদের নামে সসরকারি বরাদ্দকৃত ৩০ কেজি করে ওই চাল ঠিকই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
সেই হিসেবে ১৬ মাসে একেকজনের নামে বরাদ্দকৃত ৪৮০ কেজি করে চাল আত্মসাত করা হয়েছে। আবার চারজনের মিলে সেই চালের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৯২০ কেজি। চারজনের প্রতি মাসে মাসে ১২০ কেজি হারে এই চালগুলো এতোদিন গোপনে আত্মসাত করে আসতেন আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু ও তাঁর লোকজন।
চাল আত্মসাতের এই বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুর্যোগের মুহূর্তে ত্রাণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। তার পরেও এই ধরনের একটি বড় অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। চাল তাঁকে এখন ফেরত দিতেই হবে। ফেরত না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র মতে, ১৬ মাস আগে গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভানপুর গ্রামের জয়েন উদ্দিনের মেয়ে জাহানারা (কার্ড নম্বর-১৩৯), আনেস আলীর মেয়ে সামেনা বেগম (কার্ড নম্বর-১৪১), জনাব আলীর মেয়ে মরিয়ম (কার্ড নম্বর-১৩১) ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বলিধপাড়া গ্রামের জহিরের মেয়ে রঙিলার নামে ভিজিএফ’র (দুস্থমাতা) কার্ড করে দেওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। কিন্তু এতোদিন পরে সেই চালের হদিশ পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারপরেও তাঁরা ভয়ে অভিযোগ করতে পারেননি।
তাঁদের হয়ে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে চাল বিতরণ তদারকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গত ৩০ এপ্রিল একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু গত ১৬ মাসের আত্মসাতকৃত এক হাজার ৯২০ চাল আগামী ১৫ মে’র মধ্যে ফেরত দেওয়ার লিখিত মুচলেকা দেন। এরপর বিষয়টি ধামা-চাপা দেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা চলতে থাকে।
এদিকে চাল আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলু সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘কিভাবে এটি হয়েছে বলতে পারব না। তবে ভুলবুঝাবুঝির কারণেই এমনটি ঘটেছে। আমি সব চাল ফেরত দিয়েছে। ওই চার নারী আমাকে প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন। এই ধরনের ভুল আর কখনো হবে না।’
সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন শাপলা সিল্কসিটিনিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। সবাই বসে চেয়ারম্যানকে চাল ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তার নিকট থেকে লিখিত নেওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, এই ইউনিয়নের একটি রাস্তার কাজের অনিয়মের অভিযোগ করার কারণে এলাকাবাসীর ৪ জনের নামেই উল্টো চাঁদাবাজির মামলা করা হয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম টুলুর ইন্ধনে। এ নিয়ে গত ২৩ একটি অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন রাস্তাটি পরিদর্শন করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে মামলাটি দ্রুত তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাদী ওয়ার্ড সদস্য ফিরোজা বেগমকে। পাশাপাশি আসামিদের ক্ষতিপূরণও দিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তিতে চেয়ারম্যানের দাপটে আর সেই নির্দেশ পালন করেননি ওয়ার্ড সদস্য ফিরোজা বেগম। ফলে এখনো মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে নিরাপরাধ চার এলাকাবাসীকে।
স/আর
আরও পড়ুন: