রাজশাহীর বুকে সংবাদপত্র বিক্রি করে এখনো ক্লান্তহীন খুকি

ফাতেমা বিনতে করিম

“আমি একজন সংবাদপত্র বাহক যখন বোয়ালিয়া থানার, মতিহার থানার অন্তঃগত ভাই বোনদের হাতে তুলে দিলাম, তারা বিনিময়ে দিলো ছলনা অভিনয়। আমি একখন্ড মোমবাতি কখন যে নিভে যাবো জানিনা, আমি চেয়েছিলাম জ্বলতে জ্বালাতে আমি একজন সংবাদপত্র বাহক, আমি জ্বলবো জ্বালাবো কিন্তু নিভবো না।”

এই ছন্দ নিয়ে রাজশাহী নগরীতে সংবাদপত্র বিক্রি করে জীবন কাটাচ্ছেন দীল আফরোজ খুকি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়ে হেটে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংবাদপত্র বিক্রি করেন তিনি। রাজশাহী শহরে প্রায় ৪০ বছর ধরে পায়ে হেটে সংবাদপত্র বিক্রি করেন খুকি। শহরের একমাত্র নারী সংবাদপত্র বিক্রেতাও হলেন খুকি।

১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার আত্মীয় স্বজন তাকে গৃহ ছাড়া করেন। তারপর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কারও দয়ার পাত্রী না হয়ে বেছে নেয় সংবাদপত্র বিক্রির পেশা। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক সহ প্রতিদিন ৩০০ পত্রিকা তিনি বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিদিন তার আয় ৩০০ টাকার কম হলেও বেশি হয় না।

খুকি জানান, এই টাকা থেকে কিছু নিজের ক্ষুদা নিবারণের জন্য খরচ করেন এবং বাকিটা মানুষের কল্যানের পিছে ব্যয় করেন। পত্রিকা বিক্রির কারণে আত্মীয় স্বজন তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেন না। নানা অপবাদ এসেছে তার মাথায়।

থেমে যাননি তিনি। অবিচল রয়েছে নিজের পেশায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়ে হেটে পত্রিকা বিক্রি করেন প্রতিদিন। তবুও তিনি এখনো ক্লান্তহীন খুকি।

ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আবারও তিনি প্রস্তুতি নেন নতুন দিনের খবরের কাগজ মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার। রাজশাহী শহরের সাহেব বাজার, সাগরপাড়া, কোর্ট স্টেশন, রাজশাহী রেইল স্টেশন, ঢাকা বাস স্ট্যান্ড, নওদাপাড়া বআম চত্বর সহ নগরীর আরও অনেক যায়গায় পায়ে হেটে তিনি পত্রিকা বিক্রি করেন।

খুকি বলেন, “আমার খুব দঃখ। আজ পর্যন্ত কেও আমার সালামের উত্তরও দেয় না। আমি পেপার বিক্রি করি বলে কেও আমার পরিচয় দিতে চায়না। পরিবারের কারও বাড়িতে গেলে আমাকে তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়না৷ এমনকি আমার বোনের বাড়িতে গেলেও তাড়িয়ে দেয়।” মানুষের অবহেলা, ধিক্কারকে পিছনে ফেলে জীবন বাচানোর লড়াই লড়ছে খুকি।

সংবাদপত্র বিক্রিকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজে তিনি অটুট। এভাবেই কাটছে তার প্রতিটা দিন। আর আমৃত্য এই পেশার সাথে থেকেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি।

তবে খুকির পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা বলছেন, কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এই নিঃসন্তান নারী। তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আরো একগুয়ে স্বভাবের হয়ে উঠেন তিনি। বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে একাই থাকেন। কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা নেন না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পত্রিকা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।

স/অ