সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
খরাপ্রবণ এলকা হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্প। প্রকল্পের নতুন নতুন উদ্ভাবন এ অঞ্চলের কৃষিকে সমৃদ্ধ করছে, যা এ জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য একটি উদ্যোগ হচ্ছে, পাতকুয়া খনন প্রকল্প। কূপ খননের পর সেখান থেকে পানীয় ও কৃষিকাজের জন্য পানি উত্তোলনে যে পাম্প ব্যবহার করা হয়, তা সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে চালিত।
দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে পান। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই এক বা একাধিক পানের বরজ আছে।
পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই এ উপজেলার বাসিন্দারা বংশপরম্পরায় পানচাষ করে আসছেন। বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাঁধের বাজারে বরজ থেকে তুলে আনা পান বাজারজাত করার জন্য বাছাই করছিলেন মো. শামসুল হক মৃধা ও মো. আমজাদ মৃধা।
এই দু’জন জানালেন, তারা সকাল ও বিকালে বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করেন। এক্ষেত্রে বিকেলে সংগৃহীত পানগুলো স্ট্রিট লাইটের নিচে বসে বাছাই করার পরদিন তা মোকামে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা আরও বললেন, স্ট্রিট লাইট থাকায় তারা সন্ধ্যার পরও কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, চলাচলের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয়েছে।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, বিনামূল্যে সৌরবিদ্যুৎ’ এবং ‘গ্রাম হবে শহর’ এই স্লোগানকে মূলমন্ত্র করে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিটা কর্মসূচির আওতায় অংশীজন সংস্থাগুলো নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় প্রকল্পটিকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন।
এর ফলে গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, ব্যবসায়ী, নারী-পুরুষ উদ্যোক্তারা তাদের জীবনযাত্রায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বাগমারা উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের মোমেনা বিবির বড় মেয়ে রোজিনা রাজশাহী কলেজে মাস্টার্সে পড়ছেন।
লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করতে রোজিনা বাড়িতে টিউশনি করছেন। রোজিনা জানালেন, সৌরবিদ্যুৎ থাকার কারণেই আমি সন্ধ্যা ও রাতে দুই ব্যাচে টিউশনি করাতে পারছি।
পাশের গ্রাম বাড়ানগরের মেছের আলী প্রামাণিক অসুস্থ হওয়ায় এখন আর কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। সংসার চলে তার স্ত্রীর চালানো ছোট্ট মুদি দোকানের আয় দিয়ে। নিঃসন্তান এই দম্পতি সরকারের দেয়া সৌরবিদ্যুৎ পেয়ে খুব খুশি। সৌরবিদ্যুতের আলোয় প্রাত্যহিক কাজকর্ম ছাড়াও রাতে চলাফেরা করতে বেশ সুবিধা হচ্ছে বলে জানালেন মেছের আলী প্রামাণিক। বস্তুত এ অঞ্চলের অসংখ্য উপকারভোগীর মধ্যে মেছের আলী প্রামাণিক হচ্ছেন একজন; যিনি ইডকল-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘রুরাল এনার্জি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ-রেডি’ গত চার অর্থবছরে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বাগমারা উপজেলায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল ভোগ করছেন।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. জিল্লুর রহমানের মতে, ইডকলের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে প্রকল্পটি বেশ ভালোভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্প সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘রেডি’র টিমও এক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক ও সেবাপরায়ণ। সোলার স্থাপনের পর তিন বছর পর্যন্ত তারা ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে।
প্রত্যেক গ্রাহকের বাড়ি ছাড়াও স্ট্রিট লাইটগুলোর খুঁটির সঙ্গে ইডকলের হটলাইন নম্বর ১৬৬৫৩ এবং ‘রেডি’র কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংবলিত স্টিকার লাগানো আছে। এসব নম্বরে ফোন দিয়ে গ্রাহকরা লাইটের যে কোনো ত্রুটি বা সমস্যার কথা জানানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সমাধান মিলে। কোনোরকম হয়রানি ছাড়া দ্রুততার সঙ্গে গ্রাহক সেবা প্রদান করায় লোকজনও খুবই সন্তুষ্ট।
shahudul1983@gmail.com