সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত ৩ খুনির নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছে। তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে আবরারের পরিবার।
এমনকি আবরারকে রুম থেকে ডেকে নেয়া এবং পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নামিয়ে আনা খুনিরও এজাহারে নাম আসেনি।
এ সব দাবি করে আবরারের পরিবারের সদস্যরা বলছেন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ৩ শিক্ষার্থীর নাম মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছে।
এরা হলেন ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল, ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ ও গালিব।
চার্জসিটে ওই খুনিদের নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করেছেন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, কোনো আসামি বাদ পড়লে অবশ্যয় চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, সিসি টিভির ফুটেজে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। কয়েকটি ফুটেজে বিভিন্নভাবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া খুনিদের শনাক্ত করা যাচ্ছে। মামলার সময় সব ফুটেজ দেখা হয়নি। তাই অনেকেই মামলার এজাহার থেকে বাদ পড়েছে।
তিনি বলেন, হত্যায় অংশ নেয়া ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। ভাইয়াকে রুম থেকে ডেকে নেয়ার সময় সাইফুলকে দেখা গেছে এবং পিটিয়ে যখন লাশ বাইরে বের করা হচ্ছে তখন অনেকের সঙ্গে সাইফুলও ভাইয়াকে ধরে বের করেছে। অথচ এজাহারে তার নাম নেই।
ফাইয়াজ বলেন, ১৭ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ টর্চার সেলে ভাইয়ার মোবাইল কেড়ে নিয়ে চেক করতে থাকে। তার সঙ্গে শিবিরের কোনো কানেকশন আছে কিনা? তার নামও মামলার এজাহারে আসেনি। ভাইয়াকে ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে আরেক শিক্ষার্থী গালিব একাধিকবার টর্চার সেলে আসা-যাওয়া করেছে। তার নামও নেই এজাহারে।
আবরারের বাবা ও মামলার বাদী বরকতউল্লাহ বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হত্যায় অংশ নেয়া অনেকের নামই মামলায় নেই।
তিনি বলেন, ৭ অক্টোবর আবরারের লাশ আনতে আমি ঢাকায় যাই। ওই সময় তাড়াহুড়া করে পুলিশ আমাকে যেভাবে বলেছে আমি সেভাবে মামলা করেছি। আমি তো কাউকে চিনি না। পুলিশ নিজেরাই আসামিদের শনাক্ত করে রেখেছিল। আমি শুধু মামলার কপিতে স্বাক্ষর করেছি। এখন একের পর এক সিসি টিভির ফুটেজ দেখছি। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হত্যায় অংশ নেয়া অনেকেই এজাহার থেকে বাদ পড়েছে। মামলা থেকে বাদ পড়া খুনিদের চার্জসিটে নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করেন বরকতউল্লাহ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই ওহিদুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। সিসি টিভির ফুটেজসহ সব কিছুই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কোনো আসামি বাদ পড়লে চার্জশিটে অবশ্যয় তাদের নাম আসবে।
গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক মারপিট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।