নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পবা উপজেলার সেই দলিল লেখক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে এবার দলিল জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভাপতি এসএম আয়নাল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই সমিতিরই এক সদস্য। জালিয়াতির অভিযোগে দুটি দলিল স্থগিত করে রেখেছেন পবা উপজেলার সাবেক সাবরেজিষ্ট্রার।
এদিকে দলিল জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পবা দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের মাঝে। তারা ঘটনাটির তদন্ত করে জড়িত দলিল লেখকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরে এসএম আয়নাল হকের বিরুদ্ধে মহনাগরীর এয়াপোর্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন দলিল লেখক সমিতির নির্বাহী সদস্য শরিফুল ইসলাম।
গত ১০ মে করা ওই জিডিতে শরিফুল উল্লেখ করেছেন, তাঁর নাম নকল করে পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এসএম আয়নাল হক গত ২ ফেব্রুয়ারি দুটি দলিল সম্পাদন করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে শরিফুল প্রতিবাদ করলে উল্টো তাঁকেই আয়নাল হক নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নামে দলিল হয়েছে। অথচ আমি নিজেই জানি না। পরে সাব রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে বিষয়টি জানানোর পরে আয়নাল হকের জালিয়াতিটি ধরা পড়ে। এরপর আমি বিষয়টি নিয়ে থানায় জিডি করেছি। কিন্তু আয়নাল হক তাঁর লোকজন দিয়ে এখনো আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
এদিকে পবা রেজিষ্ট্রি অফিস সূত্র মতে, উপজেলার কাপাশমুল গ্রামের মানসিক ভারসম্যহীন আশরাফ আলী নামের এক ব্যক্তির ২১ শতক জমি জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে দেন আয়নাল হক। দলিল লেখক সমিতির আরেক সদস্য শরিফুলের নাম উল্লেখ করে ওই দলিলটি করে দেওয়া হয় হাসিনা বেগম নামের এক নারীকে।
৮৪৪নম্বর ওই দলিলটি জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পাদন হয়েছে টের পেয়ে পরে ওই সময়ের সাব রেজিষ্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি দলিলটি সম্পাদন করা হয়। একইদিনে একইভাবে ৮৫৫ নম্বর দলিলটিও সম্পাদন করেন আয়নাল হক।
ওই দলিলের গ্রহীতা হলেন আবুল হোসেন এবং দাতা হলেন রুপভান বিবি। দুটি দলিলই সম্পাদন করা হয় পবা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের পিয়ন আমিনুলের যোগসাজসে। পরে সাব রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে আয়নাল হক স্বাক্ষর দিয়ে দলিলের টোকেন সংগ্রহ করেন। এরপর বিসয়টি জানাজানি হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন পবা সাব রেজিষ্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি বলেন, ‘দুটি দলিল সম্পাদনের চেষ্টা করা হয়েছে। দলিল বইয়ে টিপসহি পর্যন্ত হয়েছে। তবে পরবর্তিতে বিষয়টি টের পেয়ে শেষ পর্যন্ত দলিল দুটি আমি আটকে দিয়েছি। এখনো স্বাক্ষর করিনি।’
এর আগে গত বছর আয়নাল হকের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে ৩৭টি দলিলের মাধ্যমে সরকারের ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জেলা দলিল রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে আয়নাল হকের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করেন আয়নাল হক। আদালত তাঁর আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন বাতিলের আদেশটি স্থগিত করে দেন।
পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাবেক সম্পাদক জেবর আলী বলেন, ‘আয়নাল হকের অনিয়মের কারণে আমরা চরমভাবে অতিষ্ঠ। তার কারণে দলিল লেখক সমিতির সদস্যদেরকেও নানাভাবে হয়রানি হতে হচ্ছে। তিনি যেসব অন্যায় করে যাচ্ছেন, সেগুলোর তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।’
আরেক সদস্য ও সাবেক সহসভাপতি সাদেকুল জামাল কাজল বলেন, ‘আয়নাল হকের কারণে দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা জিম্মি হয়ে আছে। তিনি নিজে অপকর্ম করে এখন সেই দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন অন্যদের ওপর। এ কারণে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্প্রতি দুটি দলিল সম্পাদন করেছেন। এর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
তবে জানতে চাইলে পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আয়নাল হক বলেন, ‘ওই দলিলে কার স্বাক্ষর আছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হোক। আমি কোনো জালিয়াতি করিনি। আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নাই।’
আরকে প্রশ্নের জবাবে আয়নাল হক বলেন, ‘দলিলে তো আমার নাম নাই। তাহলে আমি কিভাবে জালিয়াতি করবো।’