বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অপারেশনের পর দুটি কিডনি হারানো রওশন আরার ডান কিডনি ভালো ছিল। অপারেশনের পর তার হিস্টোপ্যাথলজি বা কোষকলা পরীক্ষায় এই তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর রোগী রওশন আরার বাম পাশের কিডনিতে অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ-এর চিকিৎসকরা। পরে জানা যায়, তার ডানপাশের কিডনিটিও নেই। গত ৩১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৫ নভেম্বর সেই তদন্ত কমিটি সংবাদমাধ্যমকে জানায়, কিডনির কারণে নয়, সিভিয়ার সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রওশন আরার মৃত্যু হয়েছে।
অপারেশনের পর রওশন আরার হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কিডনি দুটি ছিল জোড়া যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘হর্স-শু কিডনি’ বা ‘কঞ্জয়েন্ট কিডনি’ বলা হয়। নমুনা দেওয়ার সময় এমন কিছু বলা হয়নি যাতে বোঝা যায় কিডনি দুটির অবস্থান আসলে কোথায় ছিল। বামের কিডনিটি একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেখানে যে সিস্ট ছিল তার পরিমাপ ছিল, ১৩.৫ X ৭ X ৩.৫ সেন্টিমিটার। আর ৮ সেন্টিমিটার মূত্রনালী ছিল পুরোপুরি সংক্রমিত, যা সম্পূর্ণ দৃশ্যমান ছিল। অস্ত্রোপচারের সময় ডিম্বনাভী বা মূত্রনালী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কোনও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়নি। কোনও টিউমারের অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি। তবে ডানের কিডনি তুলনামূলক বিচারে স্বাভাবিক পাওয়া যায়, যার মাত্রা ছিল ১১ X ৬ X ৪.৩ সেন্টিমিটার এখানে ৩.৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ইউরেটার ছিল। দৈর্ঘের কারণে এটি অপর কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কেটে ফেলা কিডনিতে মজ্জা এবং আস্তরণ দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় ডানের কিডনি ভালো।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর রওশন আরার কিডনির অস্ত্রোপচার করেন বিএসএমএমইউ এর চিকিৎসকরা। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে অন্য একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেন স্বজনরা। ওইসময় সিটি স্ক্যানে তার শরীরে কোনও কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে রওশন আরার ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার প্রতিবাদ করেন। তিনি চিকিৎসকের কাছে এই ঘটনার কারণ জানতে চান।
বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া গত ২২ সেপ্টেম্বর রওশন আরার কিডনির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পাশাপাশি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়। ৫ নভেম্বর তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ওই রোগীর (রওশন আরা) জীবন বাঁচাতে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য পুঁজগুলো রিমুভ করার চেষ্টা করলে হয়তো বাম দিকের কিডনির সঙ্গে ডান কিডনিটি চলে আসে। ওটা পুরোপুরি নর্মাল ছিল। এটা ডা. হাবিবুর রহমান বুঝতে পেরেছেন কিনা, আমি জানি না। ইনফেকশন সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ায় পরে তার স্ট্রোক হয়। তার মৃত্যু হয়েছে সিভিয়ার সেপটিসেমিয়ায়।’
নিহত রওশন আরার ছেলে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন এই মর্মে চিকিৎসক পরিচালক সমিতির সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি দুটো কিডনি কেটে ফেলেছেন এই কথা স্বীকার করেন। আমি তার কথা মেনে নিয়েছিলাম, কারণ আমার মা অসুস্থ ছিল। আমরা মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রতীক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এক মাস পার হওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার কথা বলতে লাগলেন।’ চিকিৎসার সব খরচ রোগীর পরিবার বহন করবে জানানোর পরও চিকিৎসক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন অভিযোগ করে রফিক শিকদার বলেন, ‘উনার ধারণা ছিল আমার মা মারা গেলে উনি বেঁচে যাবেন।’ তিনি তার মায়ের এই মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের দ্বিতীয় একটি কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্টের আলোকে কী করা যায় তারা সে ব্যাপারে রিপোর্ট দেবে। এই কমিটিকেদুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।