মঙ্গলবার , ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সুন্দরবন ভ্রমণে সুবিধা কম, ভোগান্তি বেশি

Paris
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬ ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আজ মঙ্গলবার পর্যটন দিবস। প্রতি বছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। অথচ বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা। আর এ কারণে সুন্দরবনে বাড়ছে না পর্যটকের সংখ্যা।

 

প্রতি বছর শীতে দেশি-বিদেশিদের আগমনটা এখন অনেকটা রেওয়াজ বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কারণ শীত মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময়ে তেমন পর্যটক আসছে না সুন্দরবনে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মোংলায় আসা পর্যটকদের প্রথমত প্রয়োজন হয় একটু হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার। সেই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইজারা দেওয়া পিকনিক কর্নারে ও বন বিভাগের রেস্ট হাউস সংলগ্ন জায়গাতেও নেই একটি বিশ্রামাগার কিংবা যাত্রী ছাউনি।

এরপর নৌপথে সুন্দরবনে যাওয়ার পালা। সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা নারী-পুরুষ, শিশু ও বয়স্কদের ভাড়া করা নৌযানে যেতে হবে করমজল কিংবা হাড়বাড়িয়াসহ অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। সেখানে যেতে প্রথমেই মোংলার স্থায়ী বন্দর এলাকার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও ফেরিঘাট থেকে নৌযানে উঠতে হবে। কিন্তু নৌযানে ওঠার মতো কোনো ঘাট এখানে নেই। ঘাট না থাকায় পর্যটকরা নৌযানে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। নৌযান মালিক ও স্টাফরা টানাহেঁচড়া করেই যাত্রীদের নৌযানে তুলছে। নৌযানে উঠতে গিয়ে পর্যটকদের যে হয়রানির শিকার হতে হয় তাতে আর তাদের বন দেখার শখ থাকে না।

ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় 
এরপর নৌযানের ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য এখানে বড়, ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন ধরনের নৌযান রয়েছে। তবে সেগুলোর কোনো ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। যে যার মতো গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে পর্যটকদের কাছ থেকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব মানুষকে নিরুপায় হয়ে নৌযান মালিকদের দাবিকৃত ভাড়া দিয়েই যেতে হয় সুন্দরবনে। নৌযানে উঠতে গিয়ে ভোগান্তি, ভাড়া নিয়ে দরকষাকষির পর পর্যটন স্পটের উদ্দেশে যাত্রা। পথে পশুর নদে হঠাৎ প্রচণ্ড ঢেউয়ের মধ্যে পড়লে তখন জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন হয় লাইফ বয়ার। নৌযানগুলোয় নেই লাইফ বয়ার ব্যবস্থাও। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন নৌযানেই যেতে হয় সুন্দরবনে।
untitled-25_102073
বিশ্রামের সুযোগ নেই
করমজল ও হাড়বাড়িয়াসহ পর্যটন স্পটগুলোতে জনপ্রতি নির্দিষ্টহারে বন বিভাগকে রাজস্ব দিয়ে ভ্রমণ করতে হয়। বনের করমজলে রয়েছে দুইটি ফুট ট্রেইলার, একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। চারপাশে বেড়া দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে কয়েকটি মায়াবি হরিণ, বানরকে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় হরিণ ও বানর ঘোরাঘুরি করছে। এ ছাড়া রয়েছে কুমির ও কচ্ছপের প্রজননকেন্দ্র। এ সব দেখেই এখানে আসা পর্যটকরা তাদের তৃষ্ণা মিটিয়ে থাকেন। এখানে একটি শৌচাগার থাকলেও সেখান থেকে ৫/১০ টাকা করে আদায় করা হয়। হাড়বাড়িয়ায় পর্যটকদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। আছে শুধু একটি ‘ফুট ট্রেইলার’ ও একটি ওয়াচ টাওয়ার। বনের ভিতর ঘুরে বেড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো এলাকাও সংরক্ষিত নেই। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল, মোটেল ও কটেজ না থাকায় দিনে দিনেই ফিরে যেতে হয় তাদের গন্তব্যে। তা না হলে যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে খুলনা শহরে। এ ছাড়া সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তারক্ষী দিতে পারলেও নেই গাইডের ব্যবস্থা। একজন নিরাপত্তাকর্মী নিতে হলে এর জন্য বন বিভাগকে আলাদা টাকা দিতে হয়। অনেকেই টাকার অভাবে নিরাপত্তারক্ষী নিতে পারে না। তাদের ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে বন ভ্রমণ করতে হয়।

নিয়োগ হয়নি গাইড
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়ে ট্যুরিস্ট গাইডের। গাইডরা পর্যটকদের বন ঘুরিয়ে দেখান। কোথায় যাওয়া যাবে, কোথায় যাওয়া যাবে না, বনে কী করা যাবে, কী যাবে না- এ সব গাইডরা অবহিত করে থাকেন। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম দিকে সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মোংলায় জনসচেতনার সৃষ্টির জন্য সভা-সেমিনার ও গাইডদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু যাদেরকে ট্যুরিজম বোর্ড প্রশিক্ষণ দিয়েছেন দীর্ঘ ছয় মাস পার হয়ে গেলেও তাদের একজনকেও গাইড হিসেবে কাজে লাগানো বা নিয়োগ দেওয়া  হয়নি।

গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া শর্মিলা সরকার ও সুব্রত মণ্ডল জানান, ট্যুরিজম বোর্ড তাদেরকে গাইড হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু কোনো কাজ দেয়নি। বোর্ডের প্রচার ও প্রশিক্ষণ ছিল লোক-দেখানো এবং প্রতারণা।

 
সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘মূলত সুন্দরবন ভ্রমণের মত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এখন গড়ে ওঠেনি। তাই পর্যটকদের আগ্রহ ও আগমন কমছে বৈ বাড়ছে না।’

এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘করমজল পর্যটনকেন্দ্রকে আরো আকর্ষণীয় করতে সেখানে একটি গোলঘর ও টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া হাড়বাড়িয়াতে কাঠের ফুট ট্রেইলার মেরামত করা হয়েছে। তবে অবকাঠামোগত অনেক ঘাটতি আছে। পর্যাপ্ত বাজেট পেলে পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন করা সম্ভব হবে। পর্যটন স্পটগুলোতে জেটি ও অবকাঠামো নির্মাণ করে উন্নত করতে হবে। তারপরও বর্তমানে যে ব্যবস্থা রয়েছে তাতে পর্যটক আসলে আমরা সাধ্যমত সেবা দিতে পারব।’

সূত্র: এনটিভি

সর্বশেষ - জাতীয়