নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওপরে টিনের ছাউনি আর নিচে বেড়া দিয়ে তৈরী ছোট্ট একটি খুপরি ঘর। সেই ঘরেই বাস ভ্যানচালক বশির উদ্দিনের পরিবারের। বাসা পরিবর্তন করতে যে ভ্যানের প্রয়োজন হয়, সেই ভ্যানই চালন বশির। বলা যায়, একটি সংসার এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানোর সময় সেই সংসারের মালামাল পার করে দেন তিনি। এটিই হলো তার পেশা।
- সেই বশিরের আজ গোটা সাংসরই যেন ধুলোয় মিশে গেছে বাস নামের এক যান্ত্রিক দানবের তাণ্ডবে। শুধু সংসার নয়, তার এবং তার স্ত্রী রেশমার জীবন প্রদীপও নিভে গেছে সেই দানব বাসের তাণ্ডবে। বলছিলাম মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় বেপরোয়া বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে চাপা দিয়ে দিয়ে যে বশিরকে হত্যা করে তার কথা।
ওই ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ছোট্ট দুই শিশু আলিফ (৭) ও রাহাত (৫) এবং তাদের বড় ভাই হৃদয় এখন যেন সব হারা। বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা সংসারই চলে গেছে তাদের। বাসের ধাক্কায় ছোট্ট ঘরটির পাশাপাশি ঘরের ভিতরকার সব মালামাল তছনছ হয়ে যায়। আর তাতে সব হারিয়ে এখন যেন নি:স্ব তিন ভাই।
- তাদের মধ্যে কিশোর হৃদয় এখন কর্মজীবী। কিন্তু শিশু আলিফ ও রাহাত যাবে কোথায়। কে নিবে তাদের ভার? তারা কিভাবে মানুষ হবে কিভাবে? এমন প্রশ্নই ঘুরাপক খাচ্ছে তাদের গরিব আত্মীয়-স্বজনসহ আশে-পাশের লোকজনের মাঝেও।
নিহত রেশমার বোন শিল্পী খাতুন সিল্কসিটি নিউজকে জানান, বশিরের খুপরি ঘরে বশির তার স্ত্রী একই চৌকিতে শুয়ে ছিলেন মঙ্গলবার রাতে। একই ঘরের মধ্যে পাশাপাশি আরেকটি চৌকিতে শুয়ে ছিলো তাদের দুই শিশু সন্তান আলিফ ও রাহাত।
- রাদ দেড়টার দিকে হঠাত ঘুমন্ত অবস্থায় ঢাকাগামী কেয়া পরিবহণের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের ওই খুপরি ঘরে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই গোটা ঘরটি ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান বশির এবং তার স্ত্রী রেশমা। কিন্তা পাশাপাশি আরেক চৌকিতে থাকা তাদের ছোট্ট দুই শিশু আলিফ ও রাহাত সেই ধ্বংসস্তুপের মধ্য পড়ে থেকে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে।
একপর্যায়ে বাসযাত্রীরা বাস থেকে নেমে দ্রুত ওই দুই শিশুকে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে টেনে বের করেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুই শিশুর পাশেই ধ্বংস্তুপের মধ্যে তৎক্ষণে লাশ হয়ে পড়েছি তাদের বাবা-মা। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
- শিল্পী বলেন, ‘আমার বোন এবং বোন জামাইকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যাওয়া তাদের দুই শিশু সন্তানের এখন কি হাল হবে। আমরা এর বিচার চাই। আমরা এই শিশু দুটির বেঁচে থাকার জন্য এখন ক্ষতিপূরণ চাই। এটি না করলে তাদের আর দেখার কেউ থাকবে না। তাদের বড় ভাই হৃদয় এখন কাজ করতে পারে। কিন্তু এই দুই শিশু সন্তানের কি হবে? তারা কোথায় যাবে? কে তাদের মানুষের মতো করে মানুষ করে গড়ে তুলবে?’
স্থানীয়রা আরো জানান, ওই ঘটনায় পাশের আরো তিনটি ঘর ভেগে চুরমার হয়ে যায়। এর একটি ছিল ক্লাব ঘর এবং একটি ছিল রেলওয়ের গেটম্যানে দিপু এবং তার স্ত্রী চাম্পার বসবাসের ঘর। ওই ঘটনায় ক্লাব ঘরে শুয়ে থাকে গেটম্যান দিপু (৪০) ও তার স্ত্রী চাম্পা খাতুন (৩৫) এবং ক্লাব ঘরে শুয়ে থাকা মানিক (১৬) ও জাকিরসহ (১৯) অন্তত ১৫ জন বাসযাত্রীও আহত হন।
স/আর