রবিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্কুল ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

Paris
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬ ৭:৩৪ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

“এই তো আমার চোখের সামন দিয়া স্কুল ড্রেস পরলো, ওড়না, স্কার্ফ, বেল্ট বাইধ্যা স্কুল ব্যাগ নিয়া ঘর থাইক্যা বাইর হইলো। নীল-সাদা ড্রেস পরলে আমার মাইয়ারে একদম পরীর মতো লাগে। আমি চাইয়া আমার মাইয়ারে দেখলাম। এই দেখাই যে শেষ দেখা হইবো ভাবি নাই। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার মাইয়্যারে মাইরা ফেলবো ভাবি নাই।”

এভাবে নানা কথার বিলাপ করছেন মা নিপা মণ্ডল। আর কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো আত্মীয়-স্বজন কিংবা পাড়া প্রতিবেশীর যেন ভাষা নেই। সবাই চোখের জল ফেলছে।

ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার নবগ্রাম ইউনিয়নের আইসার কান্দি গ্রামে। আজ রবিবার সকালে নির্মল মণ্ডলের মেয়ে নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নিতু মণ্ডল নামের ‌ওই স্কুল ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একই গ্রামের প্রতিবেশী বিরেন মণ্ডলের ছেলে মিলন মণ্ডল। পুলিশ ‌ওই বখাটেকে আটক করেছে।

বিলাপ করে নিপা মণ্ডল বলছিলেন, “একজন দৌড়ে আইসা কইলো, আমার মাইয়ারে কে জানি ছুরি দিয়া কোপাইয়া মাইরা ফেলাইছে। আমি দৌড়াইয়া গিয়া দেখি সব শেষ। আমার মাইয়া মইরা গেছে। আমি এহন কি করমু। কই যামু। আমি আমার মাইয়ারে ফেরত চাই। আমার মাইয়ারে জীবিত চাই। আমরা মাইয়া যেন আবার স্কুলে যাইতে পারে। আমারে মা কইয়া ডাকে।”

স্থানীয়, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার নবগ্রাম ইউনিয়নের আইসার কান্দি গ্রামের নির্মল মণ্ডলের মেয়ে নিতু মণ্ডলকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী বিরেন মণ্ডলের ছেলে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিলন মণ্ডল উত্ত্যক্ত করে আসছিল। নিতু মণ্ডলকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিত মিলন। নিতু তা বার বার প্রত্যাখ্যান করত। এতে মিলন মণ্ডল ক্ষিপ্ত হয়।

ঈদের ছুটির পর নিতু মণ্ডল গতকাল রবিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে বাধা দেয় মিলন। এ সময় নিতু প্রতিবাদ করলে সে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পেটে, পিঠে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় নিতুর চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে এলে দ্রুত পালিয়ে যায় মিলন। স্থানীয়রা নিতুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় সে। এ সময় স্থানীয়রা বখাটে মিলনকে ধাওয়া করে একটি বিলের মধ্য থেকে আটক করে। পরে ডাসার থানা পুলিশ তাকে আটক করে। খবর পেয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাসির উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “বখাটেকে আটক করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, নিতু হত্যার খবর পেয়ে এর প্রতিবাদে নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে। স্কুল কর্তৃপক্ষও তাৎক্ষণিক স্কুল ছুটি দিয়ে নিতুকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করেন।

নিহত নিতুর সহপাঠী সীমা, শিউলি, শশীসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বখাটে মিলন মণ্ডল নিতুকে প্রায়ই বিরক্ত করতো। কিন্তু এভাবে নিতুকে হত্যা করবে তা তারা  কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। তারা মিলনের ফাঁসির দাবি জানায়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে এসব সহপাঠীরা। নিহতের বাবা নির্মল মণ্ডল বলেন, “আমার মেয়েকে এভাবে মিলন হত্যা করতে পারে- তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। যাতে করে আর কোনো বাবা যেন সন্তানহারা না হয়।”

নিতুর মা নিপা মণ্ডল বলেন, “নিতু যখন ছোট ছিল। তখন মিলন নিতুকে পড়াতো। এরপর মিলন আমার ছোট ছেলেকে পড়ায়। শুনেছি আমার মেয়েকে ও বিরক্ত করতো। কিন্তু ও আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে তা কখনও ভাবিনি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।”

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী কমলা অধিকারী বলে, “আমি পুরো ঘটনাটি দেখেছি। নিতু দিদি স্কুলে যাচ্ছিল। এ সময় আমি ওই ছেলেকে চিনি কিন্তু নাম জানি না।” কমলা বলে, “ওই ছেলেটি প্রথমে নিতু দিদিকে কি যেন বলে। এরপর পকেট থেকে একটি চাকু বের করে নিতু দিদিকে কোপাতে থাকে। সে মাটি পড়ে যায়। তবুও কোপায়। এরপর সে রাস্তার পাশে খালের পাশে পড়ে যায়। এরপর ‌ওই ছেলেটি ছুরি খালের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যায়। এসব দেখে প্রথমে আমি অনেক ভয় পাই, পরে চিৎকার করি।”

স্থানীয় সলিল বাড়ৈ বলেন, “নিতু খুব ভালো মেয়ে ছিল। এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা দ্রুত এর বিচার চাই।” নিহতের মামা উত্তম অধিকারী ও মামী সেফালী অধিকারী বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, মিলন মণ্ডলকে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাকে এমন ঘটনা আর না ঘটে।”

এ ব্যাপারে কালকিনি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনের মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়ায় মাদারীপুর জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণাকে মোবাইলে ফোন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলব। আইনি সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মিলন মণ্ডল নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, অভিযুক্ত মিলন মণ্ডলের বাড়িতে গেলে তার বৃদ্ধ দাদি ও বাক প্রতিবন্ধী বোনকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়