দুটি চাঁদাবাজির মামলায় সাতক্ষীরার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিনের ছেলে রাশেদ সরোয়ার রুমনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিজের পাসপোর্টসহ সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল আজ রোববার দুপুরে এই এমপিপুত্রকে গ্রেপ্তার করে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘রুমন গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জুলফিকার রহমান উজ্জ্বলকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় উজ্জ্বলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করে রুমন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা হয়।
এর আগে রুমন শহরের অদূরে বেনেরপোতায় পদ্মা হ্যাচারি নামের একটি চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই চাঁদা না দেওয়ায় হ্যাচারি কর্তৃপক্ষকে রুমন নানাভাবে হয়রানি করেন। একপর্যায়ে রুমন প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২১ হাজার টাকা আদায় করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিক সিরাজুল ইসলাম বুলেটকে মারপিট করে আহত করেন। এ ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ছিল।
এই দুটি চাঁদাবাজির মামলাতে গ্রেপ্তার দেখিয়েই রুমনকে দুপুরে সাতক্ষীরার বিচারক হাকিম নুরুল ইসলামের আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক জামিনের আবেদন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান ওসি। তিনি আরো বলেন, এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে এ রকম আরো ১০টি অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এমপিপুত্র রুমন একের পর এক ঘটনার কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও সংসদ সদস্য রিফাত আমিন ছেলের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি এবং রুমন অপপ্রচারের স্বীকার।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা পৌরসভা চত্বরে কাটিয়া এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জুলফিকার রহমান উজ্জ্বলকে রড দিয়ে পেটান রুমন। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আরো তিন যুবককে পেটান রুমন ও তাঁর সঙ্গীরা। ঘটনার পর উজ্জ্বলকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরার ভোমরায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রুমন। এতে তিনি অক্ষত থাকলেও দুমড়েমুচড়ে যায় তাঁর মায়ের ব্যবহৃত মিনি পাজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-১৬৩০)। ঘটনার পরপর রুমন দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।
পরের দিন ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের বাঁশতলা এলাকায় কারাগারে থাকা আসামি মিলন পালের বাগানবাড়ি হিসেবে পরিচিত দোতলা বাড়ি থেকে রাশেদ সরোয়ার রুমন ও এক তরুণীকে আটক করে স্থানীয় জনতা। তারা তাঁকে পিটুনি দেয়।
এর আগে গত রমজান মাসে সাহেব আলী নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ রয়েছে রুমনের বিরুদ্ধে। তার আগে জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িসহ কয়েকজন তরুণীকে নিয়ে শ্যামনগরের একটি রিসোর্টে ধরা পড়ে জেল খাটেন রুমন।
সূত্র: এনটিভি