সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।
এমপি শের আকবর খান বুধবার প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে তুললে তা ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ পাস হয় বলে রেডিও পাকিস্তানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এর আগেও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর নিন্দা প্রস্তাব পাস হয় পাকিস্তান পার্লামেন্টে।
একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে গিয়ে মুক্তিকামী বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালান নিজামী, মুজাহিদ ও মীর কাসেম আলী।
জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী একাত্তরে কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দুদিন আগে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন তিনি। বদর বাহিনীতে নিজামীর পরেই ছিলেন মুজাহিদ, যিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। আর জামায়াতের প্রধান অর্থ যোগানদাতা মীর কাসেম একাত্তরে চট্টগ্রামে বদর বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।
মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির লঙ্ঘন বলে পাকিস্তান পার্লামেন্টে পাস হওয়া নিন্দা প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের দণ্ড দেওয়া হচ্ছে দাবি করে বিষয়টি সব আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলতে ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই প্রস্তাবে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ৩ অগাস্ট রাতে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
পরদিনই নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ঢাকায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
এর আগেও যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের অন্যান্য নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার জবাবে দেয় বাংলাদেশ। মীর কাসেমের ফাঁসিতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিতদের পক্ষে কথা বলে পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে ঘটা ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি ‘আবারও স্বীকার করে নিল’।
পাকিস্তানের ওই বিবৃতিতেও ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে দাবি করা হয়, ওই চুক্তিতে ‘দায়মুক্তির কথা’ বলা হয়েছিল।
ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ প্রতিবাদপত্রে বলে, পাকিস্তান আবার ওই চুক্তির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ও আংশিক ব্যাখ্যা হাজির করেছে, যা ‘পুরোপুরি অগ্রণযোগ্য’।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধে নিজ দেশে বিচার করা হবে শর্ত দিয়ে ১৯৫ জন সেনা সদস্যকে ফেরত নেয় পাকিস্তান।
প্রতিবাদপত্রে বাংলাদেশ বলে, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার পরিকল্পনাকারী ও দালালরা দায়মুক্তি ভোগ করবে বা বিচার এড়িয়ে যাবে- এরকম কোনো ইঙ্গিত ওই চুক্তিতে ছিল না।
২৫ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর বাঙালিদের স্বাধিকারের দাবিকে দমন করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
তখন প্রতিরোধ যুদ্ধে নামে বাঙালিরা। নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় ঘটে।
একাত্তরে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশেরই কিছু দোসর পেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তাতে সমর্থন দেয়; গঠন করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী।
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত নেতা এবং তাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান জামায়াতও প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আসছে।
সূত্র: বিডি নিউজ