সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও হত্যার কারণ স্পষ্ট না হওয়া এবং বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যেই পুলিশ দাবি করেছে, মাহমুদা আক্তার মিতু খুনের তদন্ত ‘সঠিক পথে’ রয়েছে।
এসপি বাবুলের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তিন মাস পূর্তিতে বুধবার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, “তদন্তের ভালোই অগ্রগতি আছে।”
‘অগ্রগতি হয়েছে’ দাবি করলেও তা কতটুকু, সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য পাওয়া যায়নি। কী কারণে হত্যাকাণ্ড, সেই প্রশ্নের উত্তরও এখনও মেলেনি।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, “তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট।”
হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিলেও পরে অবস্থান বদলায় পুলিশ।
মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে, এছাড়া দুজন পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামে দুজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার নাম বলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয় মামলার আসামি মুসা ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বাবুল আক্তারের সোর্স। মিতু হত্যাকাণ্ডে অস্ত্রের জোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার এহতেশামুল হক ভোলাও পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের সোর্স হিসেবে পরিচিত।
মুসার পাশাপাশি আরও কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
চট্টগ্রাম থেকে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী মিতুকে।
এ ঘটনায় বাবুল বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন।
তার ২০ দিন পর গত ১৪ অগাস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। তার ২২ দিন পর মঙ্গলবার বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হয়।
এসব ঘটনার মধ্যেও নিশ্চুপ বাবুলের মামলার তদন্তের বিষয়ে খোঁজ-খবর না নেওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছেন না চট্টগ্রামে তার এক সময়ের সহকর্মী পুলিশ কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বুধবার বলেন, “বাদী হয়েও বাবুল ও তার শ্বশুর ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। বরং আমরাই তার সাথে যোগাযোগ করে মামলার বিষয়ে কথা বলেছি।
“বিষয়টি স্বাভাবিকতার পর্যায়ে পড়ে না,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার শ্বশুর মিডিয়াতে কথা বলছে। কিন্তু মামলার বিষয়ে তিনি (বাবুল) কোনো কথা বলেন না।”
পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক মঙ্গলবার বলেছিলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
একই প্রশ্নে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বুধবার বলেন, “তদন্ত চলছে। তদন্তনাধীন বিষয়ে অগ্রিম কথা বলা যাবে না।”
এতসবের মধ্যে বাবুল শুধু গত ১৩ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় লিখেছিলেন, “অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত… আমি তো বর্ম পরে নেই… আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।”
বাবুলের বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদের দাবি, তার ছেলেকে ‘দোষি বানানোর চেষ্টা চলছে’।
সব বিষয় বুঝে উঠতে পারছেন না বাবুলের শ্বশুর পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনও।
সূত্র: বিডি নিউজ