মঙ্গলবার , ১ মে ২০১৮ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ঝুলছে ২০০ মামলা, কমছে না শিশুশ্রম

Paris
মে ১, ২০১৮ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: দশ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিনের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামে। বর্তমানে আগারগাঁও তালতলা বিএনপি বাজারের ক্যাফে রুচিয়া বিরানি ঘরে কাজ করে সে। অটোরিকশা চালক বাবা মসলেম উদ্দিন এবং মা জেসমিন আক্তার আলাদা থাকেন।

মায়ের সঙ্গে মিরপুরে বসবাস করে ইয়াসিন। মা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। অভাবের সংসারে পড়ে হোটেলে কাজ শুরু করে ইয়াসিন। তিনবেলা খাওয়াসহ দৈনিক একশ’ টাকা আয় তার। এই বয়সে স্কুলের আঙিনায় ছোটাছুটি করার কথা। অথচ সংসার চালাতে দৈনিক সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে তাকে। ১০ বছর বয়সের মধ্যে আড়াই বছর এভাবেই সংসার চালাতে টাকা উপার্জন করেছে ইয়াসিন। দৈনিক কাজ দৈনিক আয়। ছুটির দিনেও কাজ করতে হয় তাকে।

কেবল হোটেল শ্রমিকের কাজই নয়; রাজধানীর বিভিন্ন রুটে নিয়মিত লেগুনা চালাচ্ছে শিশুরা। রাজধানীর ১৫টি রুটের লেগুনাচালকের অধিকাংশই শিশু। যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮–এর মধ্যে। মিরপুর, যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, পোস্তগোলা, জুরাইন, গুলিস্তান, মাতুয়াইল রোডে নিয়মিত লেগুনা চালাচ্ছে এসব শিশু। এছাড়া গুলিস্তান থেকে কেরানীগঞ্জ, আজিমপুর, খিলগাঁও রোডেও নিয়মিত লেগুনা চালাচ্ছে তারা। কথা বলে জানা গেছে অধিকাংশ শিশুরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

মিরপুর-২ নম্বর থেকে মহাখালী রুটে লেগুনার সহকারী শিহাব। বয়স ১০ ছুঁইছুঁই। স্কুলের আঙিনা কখনই মাড়ানো হয়নি তার। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লেগুনা চালিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করে সে। মা শরিফা খাতুনের সঙ্গে থাকে শিহাব। রিকশাচালক বাবা আজিজুল হক সন্তানের কোনো খবর রাখে না। তাই বাধ্য হয়েই দুই বছর যাবত লেগুনাবন্দি জীবন শিহাবের।

মিরপুর রুটে লেগুনার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই শ্রমিকই শিশু। কম টাকা দিয়ে শিশু শ্রমিকদের লেগুনার কাজে ব্যবহার করা যায় বলেই এই দশা। প্রতিটা লেগুনার জন্য মালিকদের ১৪শ’ টাকা জমা দিতে হয়। এছাড়াও দেড় হাজার টাকা জ্বালানি খরচ ও রুটে চাঁদাবাবদ আরও এক হাজার টাকা গুণতে হয়। সব মিলিয়ে লেগুনা প্রতি দৈনিক খরচ ৩ হাজার ৯০০ টাকা। এর উপরে আয় হলে শিহাবদের মতো চালক ও হেলপাররা টাকা ভাগ করে নেয়।

একই রুটের লেগুনা

চালক মাহাথির মোহাম্মদ মামুন (১৬)। জন্ম ঢাকার দোহারে। বাবা লিয়াকত মৌসুমী ব্যবসায়ী। সন্তানের খবর রাখেন না তিনি। মা মুর্শিদা বেগমের সঙ্গে থাকে মামুন।

“বাবা থেকেও নাই। নিজের পড়ালেখার টাকার জন্যই লেগুনাতে কাজ করি। স্কুল শেষ করেই লেগুনা চালাই। লেগুনা প্রতি দৈনিক খরচা ৩ হাজার ৯০০ টাকা। এর ‍উপরে যা থাকে আমরা দুই জন ভাগ করে নেই। আমাদের বন্ধ বলতে কিছু নাই। কাজ করলে টাকা না করলে ফাঁক্কা”, জানায় মামুন।

লেগুনা চালানো থেকে শুরু করে কলকারখানা সবখানেই চলছে শিশুশ্রম। কম টাকা দিয়ে বেশি কাজ করানোর লক্ষ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বেছে নেওয়া হচ্ছে শিশুদের। এ কারণে বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও পরিবহনে ২০০টি মামলা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর।

অধিদফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (সেফটি) মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, শিশুশ্রমের কারণে আমরা কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০টির উপরে মামলা করেছি। তারপরও শিশুশ্রম বেড়েই চলেছে। আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি শিশুশ্রম কমাতে তারপরও কমছে না, এর প্রধান কারণ আমাদের জনবল সংকট। জনবল বৃদ্ধি করলেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে। বিভিন্ন হোটেল ও লেগুনায় শিশুশ্রম বেশি। আমাদের জনবল বৃদ্ধি করে এসব স্থানে পরিদর্শন বাড়াবো।

অন্যদিকে শ্রম ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের নারী ও শিশুশ্রম শাখার সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিশু শ্রমিকের ৯৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। যার বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। মাত্র ৬ শতাংশ শিশুশ্রমিক কাজ করছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মোট ৪৭ ধরনের কাজ করে শিশুশ্রমিকরা। যে কাজের অনেকগুলোই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। দারিদ্র্য, পারিবারিক বিচ্ছেদ, স্থায়ী বিচ্ছেদ, পিতামাতার পেশা, অভিভাবকের মৃত্যু, অনাকর্ষণীয় শিক্ষা, বিভিন্ন কাজে শিশুদের কম মজুরিসহ ২৫টিরও বেশি কারণে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।

দেশে মোট শিশু শ্রমিকের ৬৬ শতাংশ কৃষিতে, ১৮ শতাংশ শিল্পখাতে, ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এবং ১২ শতাংশ গৃহকর্মী ও অন্যান্য খাতে। দেশে মোট শিশুর সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৫ কোটি। যার ৯০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় ঠিকই। মাধ্যমিকের আগেই ঝরে পড়ে প্রায় অর্ধেক। এরমধ্যে দেড় কোটি শিশু জড়িয়ে পড়েছে নানা শ্রমে।

ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, লেদ মেশিন, বাস-ট্রাকের হেলপারি, নির্মাণ, গৃহকাহে শিশুশ্রম বাড়ছে।

শ্রম অধিদফতরের পরিচালক ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ রিয়াজী  বলেন, বাস্তবতার ওপরে ভিত্তি করেই শিশুশ্রম বাড়ছে। আমরা কেউই শিশুশ্রম চাই না। তারপরও বলবো শিশুশ্রম বৃদ্ধির জন্য দায়ী বাবা-মা। অভাবের সংসারের উত্তাপের থেকে সূর্যের উত্তাপ কম।

তিনি আরও বলেন, ৩২টা কল্যাণমুখী ইউনিটের সঙ্গে কলকারখানা সম্পৃক্ত করেছি। আমরা এবার সমন্বয় করে অভিযান চালাবো যাতে করে শিশুশ্রম কমানো যায়।

বাংলানিউজ

সর্বশেষ - আইন আদালত