আমানুল হক আমান:
আর কয়েকদিন পর ঈদ-উল-আযহা। ঈদের সেই আনন্দের জোয়ারে ভাসছে গোটা দেশ। কিন্তু বাঘার পদ্মার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরের মানুষের সেই আনন্দের চেয়ে নতুন মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজশাহীর বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষের অব্যহত বন্যা ও নদী ভাঙনে দিশাহারা মানুষগুলো । বছর বছর নদীর পাড়ের এইসব ছিন্নমূল মানুষের দুঃখের চিৎকার যেন কারো কানেই পৌঁছায় না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় রক্ষা পায়নি চকরাজাপুর চরের পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর গত ৫ সপ্তাহের মধ্যে রাক্ষুসী পদ্মা কেড়ে নিয়েছে। মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে তারা এখন দিশাহারা। কিন্তু তারপরও ঈদে নতুন কাপড়ের জন্য অবুঝ সন্তানের কান্না ভেজা আবদার বাবা-মায়ের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। গত প্রায় ৫ সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
দাদপুর চরের রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে রাক্ষুসী পদ্মা গিলেছে বিঘার পর বিঘা ধান, পাট, আবাদি জমি, গাছপালা। ভাঙনের শিকার এইসব মানুষদের যৎসামান্য সহযোগিতা পেলেও শান্তনা দেবার মত কেউ নেই। বারবার সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভাঙন ঠেকানোর আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সেই ভোটের সময় দেখা হলেও সবহারা এসব মানুষের এই মহাবিপদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। অব্যাহত ভাঙন পদ্মার ও পানি বৃদ্ধির কারনে বাড়ি-ঘর সরানোর তাড়া চরবাসির।
এদিকে ঈদে কোরবানির জন্য পশু কেনা, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের নতুন জামা কাপড়ের আবদার। নতুন কাপড় তো দূরের কথা, ঈদের দিন এসব পরিবারের ভালো খাবারের নিশ্চয়তাও নেই।
পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ার শওকত জামান বলেন, ফসলী জমিসহ গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। পুরো চর পানিতে একাকার হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে ৫ শতাধিক পরিবার। তারা এখন ঘরবাড়ি শরাতে ব্যস্ত, ঈদ করবে কি করে। তবে তাঁর বিদ্যালয়টিও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টি দুবার স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য যতোটুকু প্রয়োজন তার এক অংশ পাওয়া যায়নি। তবে এরমধ্যে যারা যতোটুকু পেয়েছে অনেকেই খুশি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, নদী ভাঙন ও বন্যার কারনে চরের মানুষ চরম দূর্দশার বসবাস করছে। তাদের জন্য চাহিদার তুলনায় কম ত্রাণ হিসেবে নগদ টাকা, চাল, ডাল, মুড়ি, দিয়াশসালাই, স্যালাইন, চিনি, গুড়, মোমবাতি দেয়া হয়েছে। তাই তিনি সমাজের সুহৃদ ব্যক্তিদের কাছে চরের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান। তবে দুইদিন থেকে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার উপক্রম।
স/শ