সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ঢাকার দক্ষিণ খান মৌজায় আশিয়ান সিটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রিভিউ রায় সর্বোচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে গেছে
এক রিট আবেদনের শুনানি করে গত ১৬ জানুয়ারি হাই কোর্ট আশিয়ান সিটির ওই প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করেছিল। আশিয়ান সিটি রিভিউ আবেদন করলে ১৬ অগাস্ট অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট।
এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) রিটকারীরা পৃথক দুই আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে যায়।
এর ওপর শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার হাই কোর্টের রিভিউ রায় স্থগিত করে দ্য়ে। সেই সঙ্গে রিটকারী ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিলের আবেদন করতে বলা হয়।
আদালতে বেলা ও অপরাপর সংগঠনগুলোর পক্ষে ছিলেন ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আশিয়ান সিটির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার ফলে আশিয়ান সিটি দক্ষিণখান প্রকল্পে উন্নয়ন কাজ, জমি বেচা-কেনা বা লেনদেন করতে পারবে না বলে মিনহাজুল হক জানান।
“লিভ টু আপিলের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ থাকবে। আইনজীবী রিজওয়ানা হাসান পরে সাংবাদিকদের জানান, আপিল বিভাগে আশিয়ান সিটির প্রকল্পের সকল কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
“এর অর্থ তারা কোনো প্রকার উন্নয়ন কাজ করতে পারবে না; বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না, অর্থ লেনদেনও করা যাবে না।”
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীত দিকে হজ ক্যাম্পসংলগ্ন দক্ষিণ খান থানার আশকোনা ও কাওলা এলাকায় আশিয়ান সিটি প্রকল্প নির্মিত হচ্ছিল, যা বাস্তবায়ন করছিল আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধের দাবি নিয়ে ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর রিট আবেদন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন।
তাদের অভিযোগ, ১৯৭২ সালের ল্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেশন অর্ডার অনুসারে বাংলাদেশের কেউ ৩৩ একর বা ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারে না। কিন্তু আশিয়ান সিটি প্রকল্পের কাগজপত্র অনুসারে তারা ৪৩ দশমিক ১১ একর ভূমিতে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে।
প্রকল্প এলাকা প্লাবন ভূমি ও নিচু জমি হওয়ায় এবং সেখানে খাল থাকায় জলাধার আইন অনুসারেও ওই জমিতে আবাসন প্রকল্প করা যায় না বলে রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি আশিয়ান সিটির ওই প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বৃহত্তর বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ওই রায়ের ফলে আশিয়ান সিটির প্রকল্প এবং প্লট-ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়সহ সব কর্মকাণ্ডই অবৈধ হয়ে যায়।
আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ রায় পুর্নবিবেচনার আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি তিন বিচারকের নতুন বেঞ্চ ঠিক করে দেন, যাদের দুইজন এর পূর্বেও ওই বেঞ্চে ছিলেন।
বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতার ক্রমে দ্বিতীয় হিসাবে যোগ এই বেঞ্চে যোগ হন বিচারপতি নাইমা হায়দার।
নতুন এই বেঞ্চ গত ১৬ অগাস্ট মঙ্গলবার ওই প্রকল্পের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ গ্রহণ করে।
রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ অন্য রিটকারীরা আপিল বিভাগে যায়। চেম্বার আদালত ঘুরে ওই আবেদন আসে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
এর আগে এলাকাবাসীকে ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে ভূমি দখলের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর আশিয়ান সিটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে। পরে অবশ্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় ওই জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।
সূত্র: বিডি২৪নিউজ