সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাব ও দুই দেশের আলোচনার প্রেক্ষাপটে নিজ দেশে ফেরার প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
নিজ দেশে সহিংসতা ও নির্যাতনের ভয়াল স্মৃতি নিয়ে সদ্য পালিয়ে আসা অনেকে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আট সন্তান নিয়ে কুতুপালং অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে খোদেজা বেগম। তার স্বামীকে রাখাইনে হত্যা করা হয়েছে বলে তার অভিযোগ।
দেশে ফেরত যেতে চান কিনা এ প্রশ্নে খোদেজা বিবিসিকে বলেন, আমার স্বামীকে ওরা গুলি করে মেরেছে। ওখানে আর ফেরত যেতে মন চায় না।”
জীবন বাঁচাতে জমি-জমা, বসত-ভিটা, সহায় সম্পত্তি সব ফেলে চলে এসেছেন খোদেজা। বর্তমান শরণার্থী জীবনের কষ্টের কথা ভেবে শর্তসাপেক্ষে আবার ফিরে যাবার ইচ্ছাও জানালেন, “যদি শান্তি ফিরে আসে। যেখানে আমরা ছিলাম সেখানে যদি সব কিছু ফিরে পাই, তাহলে যাব।”
খোদেজা বেগম কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকলেও লায়লা বেগমের সাফ কথা তিনি আর ফিরতে চান না মিয়ানমারে।
বিবিসির কাছে তিনি বলছিলেন- “আমাদের স্বজনদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, মা বোনদের অত্যাচার ও জুলুম (ধর্ষণ) করা হয়েছে কিভাবে যাবো? মুসলমান দেশে আমরা এসেছি। আমাদের এখানে বোমা মেরে উড়িয়ে দাও। আমাদের কোনো আপত্তি নাই।”
সরকারীভাবে তাদের ফেরত নেয়া হবে এতে উদ্বেগ কেন জানতে চাইলে, লায়লা বেগম বলেন, “ফেরত নিয়ে যাবে! শান্তির কথা বলবে। কিন্তু দুই চারদিন বাদে আবার পোড়াবে, আবার কাটা শুরু করবে, গুলি মারবে। আর যেতে চাই না”।
পালিয়ে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এখনও শারীরিকভাবে দুর্বল, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
রোহিঙ্গা নারী পুরুষদের সঙ্গে আলাপ করে বোঝা গেল রাখাইনে সহিংসতার কথা অনেকেই ভুলতে পারছে না। এদের অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন। চোখের সামনে পুড়তে দেখেছেন ঘরবাড়ি।
রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণবাহী ট্রাকের কাছে ছয় মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমির হোসেন। তিনি বলছিলেন, রাখাইনে ১৫ কানি জমির মালিক তিনি। গরু ছিল দশটা, গোলায় ধান-চাল, ঘরবাড়ি সবছেড়ে চলে এসেছে।
কোলের ছেলেকে দেখিয়ে আমির হোসেন বলছিলেন, ওই বয়সী বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে রাখাইনে। ত্রাণ শিবিরে এত কষ্টের মধ্যে থাকার পরও যখন দেশে ফিরে যাবার প্রসঙ্গ আসে তখন আর উৎসাহ দেখান না আমির হোসেন। বলেন,
“দুই চার বছর পর পরই আমাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন হয়। এ পরিস্থিতিতে সেখানে বাস করার কথা চিন্তা করা যায় না। আমাদের ওখানে (রাখাইন) শান্তিতে থাকতে দেবে না।”
আবার রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান। ১০৫ বছর বয়সী পিতাকে কাঁধে করে পাহাড় জঙ্গল পেরিয়ে ১২ দিনে বাংলাদেশে এসেছে রমজান আলী ও তার পরিবার।
তার কথা অনেক কিছু ফেলে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে সে। রাখাইনে নতুন ঘর বানিয়েছিল তার পরবার। ১২ কানি জমি ছিল। গবাদী পশু আর অনেক ধান-চাল ছিল। ছিল না কোনো অভাব।
তার লাখ টাকার নতুন ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও নিজ দেশে ফেরার প্রত্যাশা আছে রমজান আলীর, “অত্যাচার জুলুম বন্ধ হলে, যেখানে আমরা ছিলাম সেখানে যদি থাকার ব্যবস্থা করে, বার্মা সরকার যদি শান্তি দেয়, তাহলে আমরা ফেরত যাব”।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারি পর্যায়ে আলোচনার পর বুধবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে।
অ্যামনেস্টির বক্তব্যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফেরত পাঠানোর প্রস্তাবকে ইতিবাচক উল্লেখ করেই সংস্থাটি বলছে যেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সেনাবাহিনীর সহযোগে জাতিগত নিধন প্রক্রিয়া জারি রয়েছে সেখানে কাউকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো উচিৎ হবে না।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে ২৫শে আগস্টে সহিংসতার পর সামরিক অভিযান শুরু হলে এ পর্যন্ত ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিবিসি বাংলা