বুধবার , ১৭ আগস্ট ২০১৬ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

১১ বছর আগে আজকের দিনে বোমার শব্দে কেঁপে উঠেছিল রাজশাহী

Paris
আগস্ট ১৭, ২০১৬ ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ প্রতিবেদক:

আজ দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১১ বছর। ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট সারাদেশের মতো রাজশাহী নগরীতেও সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওইদিন নগরীর ২৫টি স্থান একযোগে কেঁপে উঠেছিল। ফলে বোমায় যেন গোটা নগরীই কেঁপে উঠেছিল। এরপর  দায়ের করা হয় ৪টি মামলা। এসব মামলায় মধ্যে তিনটি মামলার রায় হয়েছে বলে সিল্কসিটি নিউজের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নগরীর রাজপাড়া থানার মামালটির সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।

তবে এ থানায় দায়েরকৃত মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয় সেসব আসামিদের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার ও বোয়ালিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলায় সাজা হয়েছে।

এছাড়া নগরীর শাহ মখদুম থানায় দায়েরকৃত আরেকটি মামলারও রায় ঘোষণা সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে নগরীর চার থানার মধ্যে তিনটি থানায় দায়েরকৃত মামলায় ১৪ জেএমবি ক্যাডারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা সম্পন্ হয়েছে।

  • সাজাপ্রাপ্ত এসব আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। এরা হলন, জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ ওরফে তারেক  (দুটি মামলায়), আবু ইছা (দুটি মামলায়), জহুরুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে সাংবাদিক এনামুল (দুটি মামলায়), আমানুল্লাহ ওরফে আবু সাইদ , কোরবান আলী ও তরিকুল ইসলাম (দুটি মামলায়), আরিফ, আব্দুর রহমান ওরফে খালিদ, তরিকুল ইসলাম, সিদ্দিকুল ইসলাম, হাসান, জাহাঙ্গীর ও আব্দুল আওয়াল ও আব্দুর রহিম।

আদালতের বিচার সম্পন্ন হওয়া মামলা ও পুলিশ সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের মতো রাজশাহী নগরীর ২৫টি স্থানে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি ক্যাডররা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নগরজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন সকাল ১১ টা ৫ মিনিটে প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় নগরী সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের একটি বিদ্যুতের খুঁটির কাছে।

এখানে একটি সাইকেলের উপর রাখা ব্যাগের মধ্যে ২ টি   বোমা রাখা ছিল। এর পর আরডিএ মার্কেটের প্রধান গেটে, রাজশাহী মহিলা কলেজের সামনে, নিউ মার্কেটের প্রধান প্রবেশ দ্বারে, রেলগেটে, রাজশাহী রেলস্টেশন চত্তরে, তালাইমারী, কাজলা, কাটাখালি, নওদাপাড়া, রুয়েটের সামনে, লক্ষীপুর পুলিশ ফাঁড়ির দেয়ালেন সাথে, রাজশাহী জেলা জজের গাড়ীর নীচে, জেলা প্রশাসকের অফিসের নীচতলায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত চত্তরের ৫ টি স্থানে সহ মোট ২৫ টি স্থানে বোমাগুলি বিস্ফোরিত হয়।

  • এই ঘটনার পর পুলিশ  ও র‌্যাব  ঘটনার বিস্ফোরনস্থল গুলি ঘিরে ফেলে এবং আশে পাশে ব্যাপক তল্লাশী চালায়। পুলিশ বিভিন্ন স্পট থেকে অবিস্ফোরিত ১০ টি তাজা বোমা উদ্ধার করে। বোমাগুলি পরীক্ষা নীরিক্ষার পর পুলিশ কর্মকর্তারা এগুলিকে টাইম বোমা তবে কম ক্ষমতা সম্পন্ন বলে দাবি করে।

বোমার  বিস্ফোরণে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজের সরকারী গাড়ীটি ক্ষতি হয়। আদালত চত্তরে বোমা বিস্ফোরণের পর পরই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নগরীতে বিভিন্ন মার্কেটগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সকল দোকানপাট। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার ও শাহ শখদুম থানায় পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেন।

বোয়ালিয়া থানার মামলা:

নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট ও আরডিএ মার্কেট এলাকায় ১৭ আগস্ট বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে ওই দিন জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ৮ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০৬ সালের ৩০ মে তিনি ১৯ জন জেএমবি ক্যাডারের নামে রাজশাহী মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

  • আদালত সূত্র জানায়, এই মামলায় ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বরর জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সাত সদস্যকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একরামুল হক চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একই সঙ্গে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ ওরফে তারেক, আবু ইছা ওরফে এনামুল হক আকন্দ, জহুরুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে সাংবাদিক এনামুল, আমানুল্লাহ ওরফে আবু সাইদ, কোরবান আলী ও তরিকুল ইসলাম।

মতিহার থানার মামলা:

নগরীর কাজলা গেটের পশ্চিম পাশে ১৭ আগস্ট বোমা বিস্ফোরনের ঘটনায় মতিহার থানার এসআই খতের আলী বাদী হয়ে ওই দিন বাদী জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ১০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, এই মামলায় এসআই চাহেল ২০০৬ সালের ৬ মার্চ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে রাজশাহী মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

  • এই মামলায় ২০০৯ সারের ২২ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক ১০ জেএমবি ক্যাডরের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, এনামুল হক, আরিফ, আব্দুর রহমান ওরফে খালিদ, তরিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, আবু ইছা, সিদ্দিকুল ইসলাম, হাসান, জাহাঙ্গীর ও আব্দুল আওয়াল।

শাহ মখদুম থানার মামলা:

নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় শাহমখদুম থানার এসআই আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে বাদী হয়ে ওই দিন জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ  ৮ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।

আদালত সূত্র জানায়, এই মামলায় শাহমখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম গত ২০০৬ সালের ১০ মে ৭ জনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলা ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর আদাল জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র (জেএমবি)- এক ক্যাডারকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রয় দেন।

রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একরামুল হক চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কাঠাল বাজার এলাকার জেএমবি ক্যাডার আব্দুর রহিম। রায়ে একই সঙ্গে তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারা- দেওয়া হয়েছে।

  • এছাড়াও অপর চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এরা হলো জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ও আরিফ। সিরিজ বোমা হামলায় অপর একটি মামলার রায়ে তারা আগেই সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

রাজাপাড়া থানার মামলা:

নগরীর রাজপাড়া থানার কালেক্টরট ভবন এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় রাজপাড়া থানার এসআই একেএম মাসুদ রানা বাদী হয়ে ওই দিন জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ১০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ২০০৬ সালের ১৫ জুন  রাজপাড়া থানার ওসি আকরাম হোসেন ১০ জনের নামে রাজশাহী মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত সূত্র সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, এই মামলায় ২ জন আসামির আগেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ, এনামুল হক, আরিফ, তরিকুল ইসলাম, আবু ইছা, কোরবান, জহুরুল ও আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। তবে এই আটজনেরও নগরীর বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় সাজা হয়েছে। ফলে পরবর্তিতে এই মামলাটি নিয়ে বিস্তারিত জানা যাায়নি।
স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর